মণিপুরে নারী নিগ্রহ, মূল অভিযুক্তের বাড়িতে বিক্ষোভকারীদের আগুন

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুই নারীকে গণধর্ষণ এবং বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনার মূল অভিযুক্তের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের নারীরা। নারী নিগ্রহে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল ছিল সংসদের উভয় কক্ষ।
মূল অভিযুক্ত মেইতেই সম্প্রদায়ের ৩২ বছর বয়সী হুইরেম হেরোডাসের নেতৃত্বে মণিপুরের থৌবাল জেলায় গত আড়াই মাসের বেশি সময় আগে কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দুই নারীকে নগ্ন করে হাঁটানো হয়। পুলিশ জানায়, হেরোডাসের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে স্থানীয় নারীরা একত্রিত হয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন।
হামলায় অংশ নেওয়া মেইরা পাইবি বলেন, ‘মেইতেই হোক বা অন্য সম্প্রদায়, একজন নারী হিসেবে, একজন নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের সমাজে এমন লোক থাকতে দিতে পারি না। এটা পুরো মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জাজনক।’
এদিকে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে উত্তাল ছিল সংসদের বাদল অধিবেশন। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ও আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের দুই কক্ষ। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, বিআরএসসহ কয়েকটি বিরোধী দল সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি দাবি করে হট্টগোল শুরু করেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, মণিপুরের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। মণিপুরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মণিপুরের ঘটনা গোটা দেশকে লজ্জিত করেছে। আমি সর্বদলীয় বৈঠকেও বলেছিলাম, এখনও বলছি, আমরা চাই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক। কিন্তু বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। বেশ কিছু বিরোধী দল ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদে অশান্তি সৃষ্টি করছেন যাতে আলোচনা না হতে পারে। আমি অভিযোগ জানিয়েই বলছি, মণিপুরের পরিস্থিতিকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, বিরোধীরা তা করছে না।’
মণিপুরে মে মাসের শুরুতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫০ হাজারের বেশি লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েক ডজন গ্রামের বাড়িঘর ও গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সহিংসতার মধ্যেই দুই নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনাটি ঘটে গত ৪ মে। ৭৭ দিনের মাথায় গত সপ্তাহে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এবং দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মণিপুর ইস্যুতে ৮০ দিনের নীরবতা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এ ঘটনা সভ্য সমাজের লজ্জা।’ দেশটির প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘সরকার পদক্ষেপ না নিলে আদালতই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেবে।’
মোদির বক্তব্যের পর পুলিশ নড়েচড়ে বসে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এ অপরাধের জড়িত অন্তত ৩০ জনকে খুঁজছেন তারা।
নারী নিগ্রহের ঘটনার দ্রুত তদন্তের দাবিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। মোদির আমলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নির্যাতনকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মূল হাতিয়ার করতে চাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার এক জনসভায় মোদির উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আপনার মনটা বড় করুন! আপনি বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য কাঁদছেন। আর আপনাদের জন্য দেশের মানুষ কাঁদছে। আপনার মনে মা-বোনদের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা নেই? একদিন এই নারীরাই আপনাদের ছুড়ে ফেলে দেবে।’
সোনালী/জেআর