ডেঙ্গুর ভয়ংকর রূপ
সম্পাদকীয়
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে ইতোমধ্যে ভয়ংকর রূপ নিয়াছে, উহাতে আর সন্দেহ নাই। বুধবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম পরিবেশিত তথ্য উদ্ধৃত করিয়া জানাইয়াছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হইয়া মঙ্গলবার ১৩ জনের অর্থাৎ রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হইয়াছে। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন দেড় সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী। মঙ্গলবারের সংখ্যাটি লইয়া চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াইল ১২৭-এ।
লক্ষণ দেখিয়া মনে হইতেছে, এই বৎসর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর নূতন রেকর্ড হইতে পারে। গত বৎসর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ২৮১ জন এই রোগে মৃত্যুবরণ করিয়াছিল। অথচ প্রাণঘাতী হইলেও রোগটি অপ্রতিরোধ্য বা নিরাময়ের অযোগ্য নহে। উপরন্তু গত দুই দশকেরও অধিক সময় পূর্বে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হইবার কারণে ডেঙ্গু সচেতনতার পাশাপাশি চিকিৎসায়ও যথেষ্ট উন্নতি ঘটিবার কথা। মূলত জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির যথাযথ মনোযোগের
ঘাটতিই যে এহেন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী– উহা অস্বীকারের কোনো অবকাশ নাই।
অধিকতর উদ্বেগের বিষয়, এই বৎসর ডেঙ্গু ঢাকাসহ প্রায় সকল জেলায় বৃহৎ সংখ্যায়ই ছড়াইয়াছে। প্রতিবেদনমতে, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে সাড়ে তিন সহস্র ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। সংখ্যাটা ঢাকার বাইরে দুই সহস্রাধিক; যথায় অন্যান্য বৎসর একই সময়ে এত ডেঙ্গু রোগী ছিল না।
অনেকের আশঙ্কা, ঢাকার বাইরের সংখ্যাটা আরও অধিক হইতে পারে। কারণ ডেঙ্গু পরীক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতাও অন্তত রাজধানীর বাসিন্দাদের অপেক্ষা অনেক কম।
আমরা জানি, ইতোমধ্যে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্রুত ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিয়াছে, করোনাকালে যাহা কাজে লাগিয়াছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণাল সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, এখনই সেই পরামর্শ শুনিতে অনিচ্ছুক।
তবে আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে ঢাকাসহ সমগ্র দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার আলস্য কাম্য নহে। করোনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাইয়া সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে তৎপর হইতে হইবে।
সোনালী/জেআর