বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল এখন কী হবে
অনলাইন ডেস্ক: মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের পর বিএনপির ভিতরে আলোচনা হচ্ছে এখন তাদের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে।
দল থেকে এর মধ্যে এক দফার পর তুলে ধরা হয়েছে ৩১ দফা প্রতিশ্রুতি। বিএনপির কেউ কেউ আশা করছেন সরকার ইতিবাচক, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। এর বিপক্ষেও মতামত রয়েছে।
এক দফার যুগপৎ প্রথম কর্মসূচি আগামী ১৮ এবং ১৯ তারিখের পর এই বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আমরা ১৮ ও ১৯ জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছি। ঢাকায় আগামী দিনের কর্মসূচি আরও ত্বরান্বিত ও তীক্ষ হবে। জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই এই সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, নির্বাচন ঘিরে কৌশলগত অবস্থান বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ দলটি এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্পষ্টভাবে অবস্থান নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে আওয়ামী লীগ আশ্বাস দিয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রশাসনকে সহায়তা করবে।
বিএনপির এক নেতা জানান, কয়েক মাস ধরেই দলের নেতা-কর্মীরা চাঙা। মাঠে-ময়দানে, সভা-সমাবেশের উপস্থিতি বেড়েছে। তৃণমূলসহ সারা দেশের নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে। সেই অবস্থান বাস্তবমুখী না হলে রাজনৈতিক গতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নিয়েও দলের ভিতরে-বাইরে রয়েছে আলোচনা।
জানা যায়, বিএনপির পরিকল্পনা ছিল, বিদেশি কূটনীতিকদের সফরের মধ্যেই ঢাকায় বড় সমাবেশ করে এক দফার আন্দোলনে যাওয়া। এর মধ্য দিয়ে দলটি আন্তর্জাতিক মহলকে এই বার্তা দিতে চেয়েছিল যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবি শুধু বিএনপির একার নয়- এটা জনগণেরও দাবি।
নেতারা মনে করছেন, সমাবেশে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হারে অংশ নিয়ে বিএনপির এই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল যে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে-বিদেশিরাও সে বার্তা পেয়েছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তাদের চূড়ান্ত টার্গেট সেপ্টেম্বর। কারণ সংবিধান অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে তিন মাস আগে অক্টোবরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগেই রাজপথে চূড়ান্ত ফয়সালা করতে চায় বিএনপি। ফলে সেপ্টেম্বরে এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসবে। তখন ঢাকায় ঘেরাওয়ের সঙ্গে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দিয়ে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। তবে এক দফার সমাবেশ ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মী বিশেষ করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস একটু বেশিই ছিল।
তাদের প্রত্যাশা ছিল, সমাবেশ থেকে সরকার পতনে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। কিন্তু এক দফার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ‘পদযাত্রা’ ঘোষণা করায় দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিএনপির লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচিতে ১৭ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। ভোলায় পুলিশের হামলায় দুই নেতা নিহত হওয়ার পরও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই আছে দলটি। কোনো কর্মসূচি ঘিরে যাতে বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে অতীতে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া সরকার বা বিভিন্ন শক্তির প্রলোভনে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার নেতিবাচক ফল আমরা পেয়েছি। কিন্তু এবার খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে অনেকটাই ধীরে চলতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
দলের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, একটি পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে এখনই রাজপথে নামানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু তারা কোনো ফাঁদে পা দেবে না।
সোনালী/জেআর