ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ৭:১৫ অপরাহ্ন

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী

  • আপডেট: Monday, July 10, 2023 - 7:00 pm

তৈয়বুর রহমান: দীঘ দিন কর্মসূচি নেই মশক নিধনের। এতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। দীর্ঘদিন প্রচণ্ড খরার পর টুকটাক বৃষ্টিপাতে জেগে উঠেছে মশা। বিশেষ করে নগরীর মহল্লাগুলোতে ড্রেন ডোবা ঝোপ-ঝাড়, রাস্তার ধারে জমে থাকা আম-জামসহ নানা আবর্জনার স্তূপে জন্ম নিচ্ছে মশা। এর সাথে আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা বিভিন্ন অব্যবহার্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা জন্ম নেয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই ডেঙ্গু রোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি রাজশাহীবাসীর।

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরীবাসী। বিশেষ করে শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে মশার উপদ্রব অনেক বেড়ে গেছে। সম্পর্কে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, মশার আক্রমণে মানুষ সুষ্ঠুভাবে ঘুমাতে পারছে না, নামাজপড়তে পারছে না, শুয়ে থাকতে পারছে না, এমন কি খেতে বসেও নিস্তার নেই। দিন দিন যেভাবে মশার উপদ্রব বাড়ছে তাতে যে কোন সময় রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গু জ্বর।

ইতোমধ্যে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে নড়েচড়ে বসেছে রাজশাহীর স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাপ্পু (৪০) নামের এক রোগী মারা গেছেন। গত শনিবার সকাল পৌনে ১০ টার দিকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএফ শামীম আহাম্মদ। তিনি বলেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর লিভার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রভাব পড়ে।

এদিকে রামেক হাসপাতালের তথ্য মতে শনিবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসাধীন ৭ জন সহ এপর্যন্ত ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয় এবং চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী গেছেন ২৭ জন। এ সব তথ্য থেকে জানা যায় রাজাধানী ঢাকার পর এবার রাজশাহীতে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু জ্বর।

রাজশাহী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এখনই রাসিকের মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা জরুরী বলে মনে করছেন রাজশাহীবাসী। এ সম্পর্কে রাসিক মশক নিধনে কি কার্যক্রম শুরু করেছে তা জানতে রাসিক পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মামুন মো: ডলারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রাজশাহীর সিভিল সার্জন বলছেন, রাজশাহীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী বিভাগীয় শহর হলেও এখানে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু মাত্র কীট।

জানা গেছে, গত জুনমাস থেকে রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগী অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শুরুর দিকে এর সংখ্যা ছিল নগণ্য। আগে দু-একজন ডেঙ্গু রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে রাজশাহী সিভিল সার্জন। সম্প্রতি এক সাথে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী রামেক হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পুরো রাজশাহীজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় ডেঙ্গু অনেকটাই মহামারির মতই ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ঢাকা থেকে অনেকেই গ্রামে চলে আসছেন গ্রামে। বিশেষ করে ঈদের সময়ও অনেকেই ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে ডেঙ্গু বহন করে রাজশাহীতে এসেছেন। তার মধ্যে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ৬ জনের পরীক্ষা তিনজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা, উপজেলার হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। করা হচ্ছে সচেতন মুলক সভা সেমিনার। ডেঙ্গু থেকে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারপত্র বিলিরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় জেলা, উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।এদিকে ডেঙ্গুর প্রস্তুতি স্বরুপ রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গু ওয়ার্ড হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে ১৮টি বেড রয়েছে। অবস্থা বুঝে বেড সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মেদ জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমান যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে বর্তি হয়েছেন তাদের ৩০নং ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্সদের সজাগ রাখা হয়েছে।

সোনালী/জেআর