বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ, চাপ বাড়ছে সড়কে
অনলাইন ডেস্ক: ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে গতকাল ঢাকা ছেড়েছে বহু মানুষ। প্রতিটা রুটেই ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বড় ধরনের যানজট বা হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি।
তবে সময়মতো বাস না ছাড়া ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। বঙ্গবন্ধু সেতুতে কয়েকটি দুর্ঘটনা ও টোল আদায় বন্ধ থাকায় সেতুর পূর্বপ্রান্তে উত্তরবঙ্গমুখী ১৩ কিলোমিটার সড়কে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার যানজট সৃষ্টি হয়।
তবে ট্রেনে গতকালও স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছে মানুষ। সদরঘাট থেকেও প্রচুর যাত্রী নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছেড়ে গেছে লঞ্চগুলো।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ঈদযাত্রা নিয়ে স্বস্তি দেখা গেছে। শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় রেলস্টেশনে ছিল না হুড়োহুড়ি। টিকিট দেখিয়েই কেবল প্ল্যাটফরমে ঢুকতে পারছিলেন যাত্রীরা।
যারা অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কাটতে পারেননি, তারা স্টেশনে গিয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছিলেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভাসমান অনেক যাত্রী অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কাটেন না।
শেষ মুহূর্তে স্টেশনে চলে আসেন। তাদের যতটা সম্ভব টিকিট দেওয়ার চেষ্টা করছি। আসন সংখ্যার ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
তবে কাউকে ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পাঁচটি বিশেষ ট্রেনসহ ঢাকা থেকে মোট ৫২ জোড়া ট্রেন বিভিন্ন লাইনে যাতায়াত করছে। এখন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়েই ঢাকা থেকে ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে।
এদিকে রবিবার পর্যন্ত বাস টার্মিনালগুলোতে তেমন ভিড় দেখা না গেলেও গতকাল চিত্র ছিল ভিন্ন। সকাল থেকেই টার্মিনালগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। শেষ কর্মদিবস থাকায় অনেকে অফিসে হাজিরা দিয়েই বাড়ির পথ ধরেন।
রংপুরের যাত্রী আবদুল মতিন জানান, গতকাল তার অফিস ছিল। সন্ধ্যা বা রাতের বাসে টিকিট না পাওয়ায় একদিন বাড়তি ছুটি নিয়ে গতকাল সকাল ১০টার বাস ধরেছেন।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হলেও বাস ছাড়তে দেরি হওয়া ও আগের মতোই বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেকে। গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে অনেক যাত্রীকে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরও বাস না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়, এলেঙ্গায় যানজট থাকায় বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে।
গতকাল সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ে। একদিকে ঢাকা ছাড়ছিল অসংখ্য মানুষ, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় ঢুকছিল পশুবাহী ট্রাক।
এ কারণে ভোর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বিকাল থেকে গাজীপুরের শিল্পকারখানাগুলোয় ছুটি শুরু হওয়ায় রাতে সড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ আরও বেড়ে যায়। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বহনকারী পরিবহনগুলোও গতকাল রাত থেকে ছেড়ে যায় বিভিন্ন গন্তব্যে।
জানা গেছে, নলকা আন্ডারপাস ও কড্ডা ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় এবার উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ঈদযাত্রা অনেকটাই নির্বিঘ্ন হয়েছে। চালকরা জানিয়েছেন, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও কম গতির গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবার যানজট হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে মহাসড়কে গাড়ি বিকল বা দুর্ঘটনা ঘটলে যানজট এড়ানো যাবে না।
এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুতে দুর্ঘটনার কারণে যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব ১৩ কিলোমিটারের দুই লেনের সড়ক একমুখী লেন করা হয়েছে।
তবে রবিবার রাত থেকে পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেতুতে দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরানোর জন্য টোল আদায় বন্ধ থাকায় ওই ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
দেশের ‘লাইফলাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও গতকাল গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে বড় ধরনের কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো যানবাহন না থামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা রিজিয়নের ২২টি থানা ও ফাঁড়ির ৬৬টি প্যাট্রোল টিমের পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পাঁচটি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌঘাটেও স্বাভাবিক ছিল যানবাহন পারাপার।
সোনালী/জেআর