সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন করি
♦ শেখ হাসিনার সাহসী অবস্থান সমর্থনযোগ্য
♦ বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ প্রকল্প আত্মঘাতী
♦ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিয়ে পর্যালোচনা জরুরি
♦ শেখ হাসিনার সরকার রেখেই সংসদ নির্বাচন
বিশেষ রিপোর্টার: চলমান ‘সেন্টমার্টিন ইস্যুতে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, সেন্টমার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রত্যাখান করার জন্য শেখ হাসিনা ধন্যবাদের প্রাপ্য। সরকার প্রধান হিসেবে তার এই সাহসী অবস্থানকে আমরা সমর্থন করি। তাকে জানাতে চাই, দেশ রক্ষার সংগ্রামে আমরা আপনার সাথেই আছি।
বৃহস্পতিবার বিকালে মহান জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রায় ১২ মিনিট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজের বক্তব্য সংসদে উপস্থাপন করেন রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা।
উত্তরাঞ্চলে সেচ ব্যবস্থাপনার ব্যাপক সমালোচনা করে এই সংসদ সদস্য বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যতদিন আমাদের কৃষি থাকবে ততদিন আমরা সংকট মোকাবিলা করতে পারবো। কিন্তু সেই কৃষি আজ চরম পানি সংকটে। বরেন্দ্র অঞ্চল হচ্ছে কৃষির সম্ভাবনাময় এলাকা। এই এলাকায় কৃষির সার্বিক অবস্থা কি-তা অনেকেই হয়তো জানেনা। উত্তরে সেচ সংকটের কারণে সাধারণ কৃষকদের আত্মহত্যার মত ঘটনা যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের মানবিক দৃষ্টিও অনেক সময় পড়ে না। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপ (বিএমডিএ) ভূর্গস্থ পানি নির্বিচারে ব্যবহার করে চলেছে। এর কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর যেভাবে কমছে; তা ইঙ্গিত দিচ্ছে অত্যন্ত ভয়াবহতার। কাজেই উত্তরের সেচ প্রকল্পের চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের পুনঃবিবেচনা করা দরকার।’
রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচিত টানা তিনবারের এই এমপি বলেন, ‘আশির দশকের পর গ্রামাঞ্চলে পানি ও সেচ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হতে শুরু করে। সাধারণ নলকূপগুলো অকেজো হতে থাকে। এতে পানির প্রতি উত্তরাঞ্চলের মানুষেরও দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন ঘটে। পানির উৎস এখন নির্ভর হয়েছে গভীর নলকূপ নামক মেশিনের উপর। টলটলে পুকুর-বিল-নদীর পানির বদলে নির্ভরতা বেড়েছে নলকূপের মোটা পাইপের উপর। এই পাইপের মাধ্যমে একজন প্রতিদিন ৩০-৩৫ লিটার ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছে। এতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার শূন্য। অন্যদিকে গভীর নলকূপ কেবল পানির উৎস নয়, গ্রামীণ মতা কাঠামোর ও রাজনীতির অনুষঙ্গও বটে। যার দ্বারা মতার নতুন সমাজ গঠিত হয়েছে। এখানেই বরেন্দ্র প্রকল্প পানির রাজনীতি গড়ে তুলেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে নতুন সামাজিক আধিপত্য। বিগত প্রায় ৪০ বছরে বিএডিসি ও বিএমডিএ কি পরিমাণ ভূর্গভস্থ পানি উত্তোলন করলো এবং এ পানি, জৈব বৈচিত্রে, পরিবেশের য়তির আর্থিক মূল্য এবং অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য থেকে যোগ-বিয়োগ করলে হিসাব পরিস্কার হয়ে যাবে।’
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পর্যালোচনা জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কৃষি বাংলাদেশকে সবসময় রক্ষা করবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের এই উদ্বেগজনক বিপর্যয় সমাধানের জন্য করণীয় নির্ধারণ জরুরি। পদ্মা, মহান্দা, যমুনা, তিস্তা নদী ও বিভিন্ন বিলসমূহ ব্যবহার করে সমগ্র উত্তরাঞ্চলের কৃষির সেচ ব্যবস্থা পুর্ণগঠন জরুরি। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গিতেও পর্যালোচনা জরুরি বলে মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করলাম। প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত আছেন। আশা করি, নিশ্চয়ই তিনি বিষয়টি উপলব্ধি করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
শেখ হাসিনার সরকার রেখেই আগামীর নির্বাচন মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যতম এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন সংবিধান অনুসরণ করেই অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের আর্দশের শক্তি মতায় থাকলে দেশের অগ্রগতি আজ নিশ্চয় বির্তকের বিষয় নয়। সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশের অগ্রগতি ও ঐতিহ্যকে চরমভাবে তিগ্রস্থ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিরোধীনীতির কোন পরিবর্তন ঘটে নাই। তাই বাংলাদেশকে চাপে রাখতে স্যাংশন ও দেশের নির্বাচনের সময় ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এ সময় তাদের এ সকল প্রচেষ্টা নির্বাচনের সময় তার অর্থ মতার পরিবর্তনে মদদ যোগানো। আমাদের দেশের জনগণের উপর আমাদের আস্থা আছে। বাইডেন সাহেবের উচিত নিজের ঘর সামলানো। শেখ হাসিনার সরকার রেখেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। বিএনপি’র উচিত নির্বাচনে আসা, বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দেয়া। তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। তবে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আতাঁত করা তিকর হবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তিকে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, অবশ্যই বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘সংকটকালীন সময়ের বাজেট’ উল্লেখ করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে। বর্তমান বাজেট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবেই সংকটকালীন সময়ের বাজেট। মুদ্রাস্ফিতি, রির্জাভ কমে যাওয়া, জ্বালানী সংকট, ডলার সংকট, নদীর পানির সংকট, সেচ ব্যবস্থার মহাসংকট ইত্যাদি সংকট সর্বত্র। এমনকি দেশে ক্রমর্বধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। সমগ্র অর্থনীতিতে কর ফাঁকি, কর ছাড়, নি¤œ মজুরী, অনিয়ম, দূর্নীতির কারণে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার সঙ্গে বিদ্যমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টনের বদলে উল্টো সর্বজনের সম্পদ মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়; তাকে স্বাভাবিক মনে যেন না করা হয়। কারণ, বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র হচ্ছে আমাদের ল্য। এই প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান না করে, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’
সোনালী/জগদীশ রবিদাস