ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

ফুলেফেঁপে উঠছে নদনদী

  • আপডেট: Monday, June 19, 2023 - 4:00 am

অনলাইন ডেস্ক: একদিকে তাপপ্রবাহ চলছে, অন্যদিকে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চলে। উজান থেকে আসা ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি।

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সব ক’টি নদনদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। যাদুকাটা, সুরমাসহ সব নদীর পানি বেড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী কয়েক দিন বন্যা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা খুব তীব্র হবে না বলে আপাতত পূর্বাভাস দেওয়া হলেও বৃষ্টিপাত বাড়লে বা ভারত থেকে উজানের পানি ছাড়া হলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কেউ কেউ বলছেন, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার উজানে ভারতের বাঁধের পানি ছাড়া হলে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব ক’টি নদীতে পানি বেড়েছে। গতকাল রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দু’দিন ধরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ জানিয়েছেন, নদীর পানি অনেক পয়েন্টেই বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। কানাইঘাটে সুরমা পয়েন্ট ছাড়াও অন্য পয়েন্টে এখনও পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

সুনামগঞ্জের ছাতকে তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বাড়ছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। ১৩টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়ক বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত।

পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ছাতক-দোয়ারাবাজার থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল। ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট মজুত রাখতে বলা হয়েছে।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১০টি স্থান ঝুঁকিতে আছে।

মনু, ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর কিছু অংশে পানি বেড়েছে। মনু ও ধলাই নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের আটটি স্থান ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের প্রস্তুতি হিসেবে জিওব্যাগে বালু ভরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনগরের একটি স্থানে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সব ক’টি নদনদীর পানি বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার কয়েকটি চরে তলিয়ে গেছে বীজতলাসহ সবজি ক্ষেত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে এবং দুধকুমার কু‌ড়িগ্রা‌মের পাটেশ্বরী প‌য়ে‌ন্টে বিপৎসীমার কাছাকা‌ছি যাওয়ার শঙ্কা আছে।

বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ।

বর্তমান বৃষ্টিপাত হিসাবে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বন্যা চার-পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তসংলগ্ন ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাসে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সিলেটে ১৫ জুন ২৪০ মিলিমিটার, ১৭ জুন ১০৯ মিলিমিটার ও ১৮ জুন ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইঞা বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এখনই গত বছরের মতো তীব্র বন্যা হওয়ার শঙ্কা নেই। তবে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

বৃষ্টিপাত বেশি হলে ভারত ব্যারাজ খুলে দেয় এবং তখন পানি এদিকে চলে আসে। এই ব্যারাজ তারা কখন খুলে দেবে, সে বিষয়ে আমরা কিছু জানতে পারি না। তাই অনেক সময় এখানে হঠাৎ বন্যা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, শুধু বৃষ্টিপাতের ওপর বন্যা নির্ভর করে না। নদী ও হাওরের পানি ধারণ ক্ষমতার ওপরও বন্যা নির্ভর করে।

এ ছাড়া আমাদের নদীর চ্যানেলগুলোতে পানি প্রবাহের সুযোগ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই পানি নেমে যেতে বেশি সময় লাগে। উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র বেসিনে হঠাৎ করে পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বন্যার আশঙ্কা থাকেই। ভারতের নীতিই হচ্ছে বর্ষায় ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা।

সোনালী/জেআর