ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

দুই নগরেই নৌকার জয়

  • আপডেট: Tuesday, June 13, 2023 - 8:00 am

অনলাইন ডেস্ক: বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বরিশালে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)।

এ নির্বাচনে তিনি ৫৩ হাজার ভোটে হারান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমকে।

এদিকে খুলনা সিটিতে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। এ নির্বাচনে তিনি ৯৪ হাজার ভোটে হারান ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. আবদুল আউয়ালকে। এ নিয়ে তিনি তৃতীয়বার এই নগরীর মেয়র হলেন।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে টানা ভোট গ্রহণ চলে। ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্রে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করে। ভোট গণনা শেষে বরিশাল নগরীর শিল্পকলা একাডেমির ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

রাত সোয়া ৯টায় তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। অন্যদিকে রাত ৯টায় খুলনা নগরীর শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দীন।

ফলাফল প্রত্যাখ্যান : নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি সিলেট ও রাজশাহী মহানগরী থেকে নিজের প্রার্থীও সরিয়ে নিয়েছে চরমোনাই পীরের দল।

গতকাল বিকালে ভোট শেষে বরিশালের চাঁদমারী এলাকার মাদরাসা রোডের মুজাহিদ কমপ্লেক্সে হাতপাখার নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল করীম।

বরিশালে নৌকা জিতল ৫৩ হাজার ভোটে : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়জুল করীম হাতপাখা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮টি।

মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন- মো. ইকবাল হোসেন (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল-৬৬৬৫ ভোট), মো. আলী হোসেন হাওলাদার (স্বতন্ত্র, হরিণ- ২৩৮১ ভোট), মিজানুর রহমান বাচ্চু (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল-২৫৪৬ ভোট), মো. আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র, হাতি- ৫২৯ ভোট), মো. কামরুল আহসান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি- ৭৯৯৯ ভোট)।

বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। মেয়র পদে ৭ জন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের পাশাপাশি বৃষ্টির বাগড়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়েছে।

ভোট গ্রহণের মধ্যে দুপুরে নগরীর ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে হামলার মুখে পড়েন হাতপাখার মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করীম। যা নিরুত্তাপ ভোটে উত্তাপ ছড়ায়। চরমোনাই পীরের ছেলে ফয়জুল এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দায়ী করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

তৃতীয়বারের মতো মেয়র হলেন খালেক : খুলনা সিটিতে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।

এর আগে ২০০৮ সালে সিটি নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র পদে জয়লাভ করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তালুকদার খালেককে পরাজিত করে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। তবে ২০১৮ সালে আবারও তালুকদার খালেক বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

বিজয়ের পর তালুকদার আবদুল খালেক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ বিজয় কেবল তার নয়, নগরবাসীর। খুলনার সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পাঁচজন। ভোটের ব্যবধানে তৃতীয় স্থানে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৪ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট। জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এস এম সাব্বির হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ ভোট। এবার নির্বাচনে ভোট কাস্ট হয় ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

ফলাফল প্রত্যাখ্যান মধুর : জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু অভিযোগ করেছেন ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল না। ভোট কেন্দ্রে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তিনি ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন।

সর্বশেষ তিন নির্বাচনে বরিশালে ২০০৮ সালে ৮১.৯৯%; ২০১৩ সালে ৭২.১% ও ২০১৮ সালে ৫৫% এর বেশি ভোট পড়ে। আর খুলনায় ২০০৮ সালে ভোট পড়ে ৭৭.৮০%, ২০১৩ সালে ৬৮.৭০% ও ২০১৮ সালে প্রায় ৬২% ভোটার উপস্থিতি ছিল। বর্তমান ইসির অধীনে সর্বশেষ নির্বাচন গাজীপুরে ভোট পড়ে প্রায় ৪৮%।

রাজশাহী-সিলেটে ভোট বর্জন : নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বরিশাল ও খুলনা সিটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর চাঁদমারী মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, বরিশাল ও খুলনা সিটি ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রশাসন দলীয়করণ করে ভোট ছিনতাই করা হয়েছে। বরিশাল সিটি ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণার আগেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে ফল প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

এ ছাড়া রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী দিলেও বরিশালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

চরমোনাই পীর আরও বলেন, বরিশাল সিটি ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। একই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই আশা করা যায় না। বিগত দিনেও হয়নি। তিনি বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন। বর্তমান আওয়াম লীগ সরকার যেভাবে নির্বাচন করছে, তা সম্পূর্ণ অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতায় ভরা। তারা দিনের ভোট রাতে দিয়ে তাদের প্রার্থীদের পাস করিয়েছিল। এই পরিবেশ থাকলে এ সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বলে পূর্বের ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ও দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, তিনি যতগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন সব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বহিরাগত লোকজনকে ভোটকক্ষে পেয়েছেন। ভোটকক্ষে অপ্রয়োজনীয় লোকজন থাকার কথা নয়। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাবেরা খাতুন স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বহিরাগত দেখিয়ে দেওয়ার পর তিনি তাদের চলে যেতে বলেন মাত্র।

তাদের মধ্যে দুজনের কাঁধে হাত দিয়ে বলেছেন, আর কয়েক ঘণ্টা পর ভোট শেষ। মানুষ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন। শুধু শুধু গ্যাঞ্জাম করে কী লাভ। এই কথা বলতে বলতে ভোট কেন্দ্রের বাইরে যাওয়া মাত্র আওয়ামী লীগের কয়েকজন তার ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে।

এতে তিনি, তার ছেলেসহ কয়েকজন আহত হন। নির্বাচনে অনিয়মে বাধা দেওয়ায় এ হামলা হয়েছে উল্লেখ করে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, এ নির্বাচনে অনিয়ম করে এবং প্রার্থীর ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ পতন ঘণ্টা বাজিয়েছে।

সোনালী/জেআর