আম || তিন জেলায় চাঙ্গা বাজার

|| আমময় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নওগাঁ ||
অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন আমমুখর। এতে চাঙা এই তিন জেলার অর্থনীতি। এ মৌসুমে এখানে কেনাবেচা হবে অন্তত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার আম। এর মধ্যে নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই হাজার কোটি টাকা করে এবং রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এবারও এখানকার আম রপ্তানি হবে জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও হংকংয়ে। তবে চাষিরা অভিযোগ করেছেন, সব কিছুর দাম বাড়লেও সে অনুযায়ী আমের দাম বাড়েনি।
ভালো মানের আম উৎপাদনের জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুখ্যাতি বেশ পুরোনো। নতুন করে নওগাঁ ছাড়িয়ে যাচ্ছে পুরোনো দুই জেলার আম চাষের সীমানা।
এ বছর শুধু নওগাঁতেই আমের আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসাবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর সম্ভাব্য বাজারদর আড়াই হাজার কোটি টাকা।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, আয়তনে প্রথম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ টন আম উৎপাদন বেশি হয় নওগাঁয়। লাভজনক হওয়ায় এখানে প্রতি বছরই বাড়ছে আম চাষ।
সাপাহারের বাগান মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি আম বাগান সাপাহার ও পোরশায়। আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়।’
এদিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসন আগেই আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। গত ২২ মে থেকে গুটি জাতের আম সংগ্রহ শুরু হলেও সুস্বাদু আম খেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।
সে অনুযায়ী, গোপালভোগ গত রোববার থেকে গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে। ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আগামী শনিবার থেকে পাড়া যাবে। নাগ ফজলি ৭ জুন, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা ১০ জুন, ফজলি ২০ জুন ও আম্রপালি ২২ জুন থেকে বিক্রি শুরু করা যাবে।
১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি-৪ ও গৌরমতি জাতের আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। তবে আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিসহ বিশেষ কারণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আগে আম পাড়ার সুযোগ থাকবে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছর ৭৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০০ টন রপ্তানির সম্ভাবনা আছে। এ জন্য আম চাষিদের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে আম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নওগাঁয় উৎপাদিত আমের প্রায় ৬০ শতাংশই আম্রপালি।
রাজশাহী কৃষি অফিস বলছে, জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ টন ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি কেজি আমের দাম গড়ে ৫৮ টাকা ধরে বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। এ বছর ৭০০ টন আম বিদেশে পাঠানো হতে পারে।
বাঘার চাষি শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, আমি এবারও সাড়ে ৬ টন আম বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ ও চোষা জাতের গুটি আম ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি ও হংকংয়ে যাচ্ছে। আরও আম যাবে। এই আম কেজিতে গড় দাম পেয়েছি ১০০ টাকা।
পুঠিয়ার চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার প্রচুর আম এসেছিল। তবে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে। এখন গোপালভোগ আম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে অনলাইন উদ্যোক্তারা এই আম বিক্রি করছেন আরও চড়া দামে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। অনলাইন উদ্যোক্তা মনু মোহন বাপ্পা প্রতি কেজি গোপালভোগ আম কুরিয়ারে ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন ৯০ টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, ‘বাজারে ভালো মানের গোপালভোগ আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ। এই আম ক্যারেটে প্যাকেটিং করে কুরিয়ার করতে মণপ্রতি আরও ৮০০ টাকা খরচ হয়। এর মাঝেই আমরা সামান্য লাভ করি।’
এদিকে এ মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টন আম। এতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করছে কৃষি বিভাগ। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলো বাণিজ্যের আশা করছে আরও বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে এই জেলায় আম চাষ হয়েছিল ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টরে। গত ১৫ বছরে আম চাষের জমি বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর। একদিকে যেমন আমের উৎপাদন বেড়েছে, তেমনি রপ্তানিও বাড়ছে।
বাগান মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, কয়েক বছরের চেয়ে এবার গাছে বেশি আম এসেছে। তবে খরায় আমের আকার কিছুটা ছোট হয়েছে। বাজারে ভালো দাম থাকলে তাঁরা এবার লাভবান হবেন।
এদিকে দেশের অন্যতম বড় আমের হাট কানসাট এরই মধ্যে জমে উঠেছে। আড়তদাররা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ নতুন আড়ত নির্মাণ করছেন। আবার কেউ আগের আড়ত গোছগাছে ব্যস্ত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, এবার আমের ‘অন এয়ার’। এ কারণে এবার ফলনও বেশি হবে।’ সমকাল
সোনালী/জেআর