‘কৃষককে বাঁচাতে পারলে বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা সম্ভব’
স্টাফ রিপোর্টার: কৃষক সমিতির জাতীয় সম্মেলনে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালে এই আমেরিকাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মার্কিনীদের ষড়যন্ত্র ও অসহযোগিতা উপেক্ষা করে দেশের কৃষকদের প্রতি আস্থা রেখে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা সেদিন লাভবান হতে পারেনি। সুতরাং, আজকেও যদি আত্মনির্ভর হয়ে আমরা দেশের কৃষক শ্রমিক ও ক্ষেতমজুরদের ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চাপ এবং নিষেধাজ্ঞাসহ বিদেশি যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা সম্ভব।
মঙ্গলবার বিকালে নাটোরের কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে জাতীয় কৃষক সমিতির ৭ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে আগত কৃষক সমিতির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে সব দল ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেও দেশের কৃষক-খেতমজুরের কোন মাথাব্যাথা নেই। তারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে না, দেশের শিক্ষা বাদ দিয়ে বিদেশে ছেলে-মেয়েদের পড়ায় না। তারা উদ্বিগ্ন বাজেটে কৃষকের জন্য কি আসছে। আইএমএফ-এর শর্ত মেনে কৃষিতে ভর্তুকি তুলে নেয়া হবে কিনা। ইতিমধ্যে জ্বালানির দাম বেড়েছে, সারের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কৃষকেরা যে এতো কষ্ট করে দেশের মানুষের জন্য খাবার উৎপাদন করছে, সেই ধান-চাল, পেয়াজ-সবজির দাম তারা পাবে কিনা। পার্লামেন্টে এ নিয়ে কেউ কথা বলবে কিনা। কারণ ৬২% ব্যবসায়ীর পার্লামেন্টে কৃষক-খেতমজুর-গরিব মানুষ, গ্রামের মানুষের কথা হয় না।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা তাদের সহযোগিতা আমাদের না দিয়ে সেটি ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেছিল। সেদিন আমাদের স্বার্থ রক্ষা করেছে এদেশের কৃষক-ক্ষেতমজুররাই। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমরা দেখি, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
রাজশাহী-২ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমরা ভুলে যাইনি, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে না দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সেদিনও তারা বিভিন্ন হুমকি ধামকি, শর্ত প্রয়োগ করে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ষড়যন্ত্র মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে বাংলার কৃষকদের প্রতি আস্থা রেখেছিল। তারা আশ্বস্ত ছিল, বাংলার কৃষক থাকতে দেশ কখনোই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেদিন লাভবান হতে পারেনি। আজকেও যদি আমরা কৃষকদের রক্ষা করতে পারি, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চাপ থেকে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করা সম্ভব।
জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নিলু, কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল মজিদ, উত্তরবঙ্গ চিনিকল আখ চাষী সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, নাটোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী লোকমান হোসেন বাদল, নাটোর জেলা জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন জাতীয় কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক দিপংকর সাহা দিপু।
সোনালী/জগদীশ রবিদাস