ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশ সদস্যরা
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/08/image-575015-1658376707.jpg)
অনলাইন ডেস্ক: কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে কনস্টেবল থেকে শুরু করে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ তালিকায় সর্বশেষ শুক্রবার রাতে যুক্ত হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এসআই রেজাউল করিম (৪৭)। কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় গ্রিন লাইনের কাউন্টার থেকে স্ত্রীসহ তাঁকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। রেজাউল সিরাজগঞ্জের সমেশপুরের বাসিন্দা ও টেকনাফের হ্নীলার আলীখালী (২৫ নম্বর ক্যাম্প) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত।
টেকনাফ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক তন্তুমণি চাকমা জানান, রেজাউলের পরিবার কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিল। স্ত্রীর লাগেজে রেখে ইয়াবা পাচারের গোপন খবরে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করা হয়। এ সময় আটক রেজাউল সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা থেকে ১৭ মে দুই সন্তান নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে আসেন তাঁর স্ত্রী।
পরে যাওয়ার সময় ইয়াবার চালানটি গোপনে স্ত্রীর লাগেজে রাখেন তিনি। ইয়াবা পাচারের বিষয়টি স্ত্রী-সন্তান জানতেন না। টেকনাফ থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছিলেন বলে দাবি করেন রেজাউল। টেকনাফের ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) হাসান বারী নুর বলেন, ‘আলীখালী ক্যাম্পের ইনচার্জ সস্ত্রীক মাদকসহ ধরা পড়েছেন বলে শুনেছি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই তন্তুমণি চাকমার মামলায় আদালতের মাধ্যমে রেজাউল ও তাঁর স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি রামুর মরিচ্যা চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে ৬ হাজার ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম পুলিশের এসআই মো. কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি। তিনি চট্টগ্রাম আদালতে চন্দনাইশ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় রামু থানায় মামলা হয়। পরে কামরুজ্জামানকে আদালত কারাগারে পাঠান।
২০২১ সালের ২২ এপ্রিল কক্সবাজারের উখিয়ায় তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ বাহিনীর তিন সদস্যকে আটক করে এপিবিএন। তাঁরা হলেন– ৮ এপিবিএনের এসআই মো. সোহাগ, কনস্টেবল মিরাজ আহমদ ও মো. নাজিম। তাঁরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে ইয়াবা কারবার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা হয়।
সূত্র জানায়, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশ সদস্যরা। ২০১৫ সালের ২০ জুন চট্টগ্রাম র্যাব-৭ প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই মাহফুজুর রহমানকে আটক করে। ওই সময় তদন্ত করতে গিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় পুলিশি সিন্ডিকেটের সন্ধান পায় র্যাব। বিশেষ বাহিনীর ভাষ্য, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকেন্দ্রিক অন্তত ১২ পুলিশ সদস্য এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুধু বড় বড় ইয়াবার চালান নির্বিঘ্নে পাচারের মাধ্যমে তাঁরা মাসে কোটি টাকা আয় করতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজুর রহমান জানিয়েছিলেন, ২০১১ ও ২০১৩ সালে কক্সবাজার ও টেকনাফে কর্মরত থাকার সময় তিনি ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। কোটিপতি হওয়ার নেশায় কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজেই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান (সদর সার্কেল) বলেন, ‘ইয়াবাসহ যাঁরা আটক হয়েছেন, দায়ভার একান্ত তাঁদের এবং আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধে জড়ানো ঠেকাতে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত কাউন্সেলিং ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর পরও কেউ অপরাধে জড়ালে, তা খুবই দুঃখজনক।’
সোনালী/জেআর