ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

১৪ দল না করলে বাংলাদেশ এতদিনে মৌলবাদের কবলে থাকত

  • আপডেট: Friday, May 19, 2023 - 4:34 am

             সাক্ষাৎকার: রাশেদ খান মেনন             সাক্ষাৎকার গ্রহণ: সাইফুর রহমান তপন (সমকাল)

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ২০১৪ সাল থেকে পাঁচ বছর সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর ভিপি ছিলেন। ১৯৬৪-৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তিনি।

  • আপনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৩ সালের ১৮ মে; সে হিসাবে ৮০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ দীর্ঘ জীবনে রাজনীতিই আপনার ধ্যানজ্ঞান। কখন যুক্ত হলেন রাজনীতিতে?

রাশেদ খান মেনন: আমার রাজনৈতিক জ্ঞান বা চেতনা সৃষ্টি হয় স্কুলে থাকতেই। আমার পরিবারে বরাবরই একটা প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করত। আমার বড় ভাই সাদেক খান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন; আরেক ভাই ওবায়দুল্লাহ খান ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারির ১০ জনের মিছিলের একজন ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর একুশের কবিতা ‘কোনো এক মাকে’ এখনও একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আবৃত্তি হয়। এনায়েতুল্লাহ খান আনন্দমোহন কলেজ, হরগঙ্গা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে এবং ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন; ডাকসুর ভিপি পদে তিনি এক ভোটে হেরে যান। এ রকম একটা পারিবারিক পরিবেশের প্রভাব আমার মধ্যে পড়েছিল।

  • পরিবারের বাইরে কারও প্রভাব রয়েছে?

রাশেদ খান মেনন: আমার বাবা যশোরে বদলি হলে আমি সেখানকার স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে আমার বন্ধু হায়দার আকবর খান রনোর সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর নানা, মামা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারও একটা প্রভাব পড়েছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কমরেড আবদুল হক প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর জনসভায় গিয়েছিলাম। ময়মনসিংহে থাকাকালে ১৯৫৫-৫৬ সালে ১০ টাকা দামের একটা মার্কিন বইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়; সেটাতে প্রথম আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিই। আমাদের এক প্রিয় শিক্ষক বোস স্যার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ সবকিছুই আমাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

  • ভাইদের প্রগতিশীল রাজনৈতিক মতাদর্শ আপনাকে প্রভাবিত করেছিল; বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাব পড়েনি?

রাশেদ খান মেনন: আমার বাবা সাব জজ, জেলা জজ, হাইকোর্টের জজ হিসেবে কাজ করেছেন। হাইকোর্ট থেকে অবসর গ্রহণের পর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুসলিম লীগ করলেও আমার বাবা উদার চিন্তার মানুষ ছিলেন। সে সময় উদার মুসলিম পরিবারে সংস্কৃতিচর্চা ছিল, এখন যা আর নেই। ছোটবেলায় আমাদের পরিবারে নাচ-গান, নাটক হতো। আমরা তাতে অংশগ্রহণ করতাম। ফলে এদিক থেকেও আমার প্রগতিশীল চিন্তাচর্চা বাধা পায়নি।

  • সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে জড়ালেন কীভাবে?

রাশেদ খান মেনন: একটা সময় পর্যন্ত বড় ভাই ওবায়দুল্লাহ খানের মতো আমারও সিএসপি অফিসার হওয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু সেটা পাল্টে গেল যখন ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের ঢাকা এলেন। সম্প্রতি প্রয়াত অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ড. এমএন হুদাসহ কয়েকজন শিক্ষক আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। তাঁরা আমাকে বললেন, তোমরা তো মন্ত্রীর সভায় যাবে, তাঁকে কিছু প্রশ্ন করো। এই বলে পাকিস্তানের দুই অর্থনীতি বিষয়ে কিছু প্রশ্ন শিখিয়ে দিলেন। আমরা যখন সভায় গেলাম, ইতোমধ্যে অর্থনীতির সিনিয়র ছাত্র রিয়াজউদ্দিন মাহমুদ বক্তৃতা শুরু করেছেন। এ নিয়ে হট্টগোল তৈরি হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেল। প্রতিবাদে আমরা মিছিল করলাম। আমার বন্ধু তালেব ও রেভারেন্ড দিলীপ দত্ত জেলে চলে গেল; রনোও কিছুদিন পর জেলে গেল। আমি গ্রেপ্তার হলাম এপ্রিল মাসে। মে মাসে জেল থেকে বের হওয়ার পর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে যোগ দিলাম। অনার্স প্রথম বর্ষে প্রথম শ্রেণি ছিল। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে বললেন– তোমার যা মনে হয় তা-ই লিখো, তবুও পরীক্ষা দাও। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণি পেলাম।

  • তখনই কি সার্বক্ষণিক রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিলেন?

রাশেদ খান মেনন: না, আরও একটু পরে। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমার ফাইলেরিয়া হলো, একটা কোর্সের পরীক্ষা ক্রাশ করল। তবে তখন নিয়ম ছিল ওই বিষয়টা বাদ দিয়ে ফল ঘোষণার। সব মিলিয়ে একটা ভালো সেকেন্ড ক্লাস পেলাম আমি। সাদেক খান তখন ব্যবসা শুরু করেছেন; ওবায়দুল্লাহ খান তখন কুমিল্লা বার্ডের পরিচালক। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার। আমাকে বলা হলো, ‘তোমাকে বার্ডে যেতে হবে, সেখানে ভাইভা হবে। এতে পাস করলে স্করারশিপ নিয়ে এমএ করে সরাসরি ডক্টরেট করে দেশে ফিরে আসবা।’ কিন্তু যেদিন আমার ইন্টারভিউ ছিল, সেদিন টাঙ্গাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন। আমি কাউকে কিছু না বলে সম্মেলনে চলে গেলাম। এই হলো আমার সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়।

  • তখন তো শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র ইউনিয়ন খুব শক্তিশালী ছিল। আমজনতার মধ্যে বামপন্থিদের প্রভাব কেমন ছিল?

রাশেদ খান মেনন: শুনুন, আওয়ামী লীগের ছয় দফার আগ পর্যন্ত বামপন্থিরাই ছিল এগিয়ে। ছয় দফার পরই রাজনীতির বাঁকবদল ঘটতে থাকে।

  • এর কারণ কী?

রাশেদ খান মেনন: একটা কারণ ছিল কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভক্তি। এতে শক্তি ক্ষয় হলো। আরেকটা হলো, মানুষের জাতীয়তাবাদী আবেগ বামপন্থিদের বুঝতে না পারা। ছয় দফা দিয়ে শেখ সাহেব মানুষের মনের কথাটা বলে দিলেন। যদিও আমাদের অনেক দলিলে কথাটা ছিল; সেটা ছিল অনেক কথার ভিড়ে একটা কথা; শেখ সাহেবের মতো সরাসরি বলতে পারিনি। রাজনীতির বাঁকবদল তখনই হয়, যখন রাজনীতিকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। শেখ সাহেব সেটা পেরেছিলেন।

  • মানুষের মনের কথা বুঝতে না পারার এ অক্ষমতা কেন?

রাশেদ খান মেনন: দেখুন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটেছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যেখানে বামপন্থিদের মূল ভূমিকা ছিল। অর্থাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভূমিকাটা রচনা করে বামপন্থিরা। কিন্তু যখন বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসার সময় এলো, তখন বামপন্থিরা রুশ-চীন বিতর্ক তথা জাতীয় বিষয় ছেড়ে আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। কমিউনিস্ট পার্টির ১৯৬৮ সালের কংগ্রেস রিপোর্ট বলছে– স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা এটাকে সঠিক মনে করি না। জাতীয়তাবাদী আবেগ বুঝতে না পারাটা বামপন্থিদের ব্যর্থতা।

  • আপনাদের অবস্থান কী ছিল তখন?

রাশেদ খান মেনন: আমরা তো তখন বহু ধারায় বিভক্ত– কেউ নকশালপন্থি, কেউ চারু মজুমদারপন্থি, এপন্থি-সেপন্থি। যদিও পিকিংপন্থিদের মূল অবস্থান ছিল স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা, পার্টির মূল অংশ হক-তোয়াহা নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায়। আমরা যাঁরা ইয়ং ছিলাম তাঁরা কমিউনিস্ট-বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি করে ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে দাঁড়িয়ে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা ঘোষণা দিই। বলতে পারেন, আমরা কিছু অনভিজ্ঞ তরুণ বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বা জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে পার্টির মূলধারা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে পার্টি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম; যার ধারাবাহিকতায় আজকের ওয়ার্কার্স পার্টি। সেদিন ওই ঘোষণার পর ইত্তেফাকে মানিক মিয়া উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন– কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এ ধরনের স্লোগান তুলছে, এদের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নেওয়াও হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এছাড়া কাজী জাফর, মোস্তফা জামাল হায়দার, আবদুল্লাহ আল নোমানকেও দণ্ড দেওয়া হয়।

  • মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী নতুন সরকারের সময় আপনাদের অবস্থান কী ছিল?

রাশেদ খান মেনন: আমরা তখন একটা উপযুক্ত বিরোধী দল গঠনের চেষ্টা করেছি। কোনো হঠকারী পন্থা অবলম্বন করিনি।

  • এতেও তো সফল হননি আপনারা; জাসদ প্রধান বিরোধী দল হয়ে গেল।

রাশেদ খান মেনন: হ্যাঁ, আমাদের নেতা কমরেড অমল সেন বলতেন– কমিউনিস্টরা যোগ্যতা রাখেনি বলেই জাসদের জন্ম হয়েছিল। তবে জাসদও তো টিকতে পারেনি।

  • তখন তো মওলানা ভাসানী বিশাল ভাবমূর্তির একজন নেতা। তাঁকেও কাজে লাগাতে পারেননি আপনারা।

রাশেদ খান মেনন: মওলানা ভাসানী তখনও একটা বিরোধী দল গড়ে উঠুক– এ প্রচেষ্টার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু তাঁর কৌশলে ঝামেলা ছিল। ইতোমধ্যে কমিউনিস্টরা আরও বিভক্ত হয়। মওলানা ভাসানী তখন আরও বেশি ইসলাম এবং তাঁর মুরিদদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে অপাঙ্‌ক্তেয় ব্যক্তিরা তাঁর চারপাশে ভিড় করেন। তাঁদের সঙ্গে পেরে ওঠা যাচ্ছিল না। তাই ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা ইউনাইটেড পিপলস পার্টি-ইউপিপি গঠন করি।

  • একটা আলোচনা আছে, আজকে আপনারা রাজনীতিতে যে কৌশল অবলম্বন করছেন, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নিজ শক্তিকে বিকশিত করা; সেটাই একসময় সিপিবি তথা কমিউনিস্ট পার্টি অনুসরণ করত। কী বলবেন আপনি?

রাশেদ খান মেনন: না, দুটোর মাঝে আপাতদৃষ্টে একটা মিল থাকলেও বাস্তবে তা নয়। সিপিবির মতো আমরা কখনোই মনে করি না যে, আওয়ামী লীগ একটা প্রগতিশীল দল। এর সঙ্গে জোট বেঁধে প্রগতিশীল রূপান্তর সম্ভব। আমরা বরং মনে করি, এটি বুর্জোয়াদের বিশ্বস্ত দল। ইদানীং যা এক ধরনের ‘অলিগার্কিক’ (ধনিক গোষ্ঠীতান্ত্রিক) শাসনে রূপ নিচ্ছে। আমরা কৌশলগত কারণে, বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকানোর জন্য তাদের সঙ্গে জোট করেছি। আমরা ১৪ দল না করলে বাংলাদেশ এতদিনে মৌলবাদের কবলে থাকত। এ জোটের মাধ্যমে একটা মৌলিক রূপান্তর ঘটিয়ে দেব– এমনটা আমরা কখনও ভাবিনি, যা সিপিবির ভাবনা ছিল।

  • ১৪ দল হিসেবে আপনাদের পথচলার প্রায় দুই দশক হতে চলেছে। এ জোটের সংহতি বিশেষত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক এখন কী অবস্থায় আছে?

রাশেদ খান মেনন: খুব একটা স্বস্তিকর অবস্থায় নেই। আমরা যেভাবে এ ঐক্যকে দেখতে চেয়েছি, আওয়ামী লীগ সেভাবে দেখছে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার অবসান চেয়েছি। অথচ আওয়ামী লীগ উল্টো তাদের তোষণ করছে। মৌলবাদীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই; কিন্তু সমাজে তাদের প্রভাব অনেক বেড়েছে। এটা মোকাবিলা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। একটা বড় ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া এদের মোকাবিলা সম্ভব নয়।

  • ১৪ দলের অপর গুরুত্বপূর্ণ শরিক জাসদ কি আপনাদের মতোই ভাবে?

রাশেদ খান মেনন: না; আমি জানি না, তাদের মূল্যায়ন কী। তারা বরং আওয়ামী লীগকে আরও কাছের বলে মনে করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তারা সবকিছু করতে চায়।

  • আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনাদের ভাবনা তাহলে কী?

রাশেদ খান মেনন: আমরা এখন পর্যন্ত ১৪ দলগতভাবেই নির্বাচন করতে চাই। তবে আমাদের নিজস্ব প্রতীকে করব।

  • হাতুড়ি প্রতীক দিয়ে কি নৌকার ভোট টানতে পারবেন?

রাশদ খান মেনন: যদি ১৪ দলীয় জোট হয় তাহলে হবে, না হলে হবে না। আমরা এ ঝুঁকি নেব।

  • এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ তো মনে করতে পারে যে, জোটের এমপি সংখ্যা কমে যাবে। এ শঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগ আপনাদের কাঙ্ক্ষিত আসন সংখ্যার চেয়ে কম আসন ছাড়তে পারে।

রাশেদ খান মেনন: সে ঝুঁকি জেনেই তো আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

  • আপনাদের এমন অবস্থানের কারণেই কি চলমান পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একাই হাঁটতে দেখা যাচ্ছে; আপনাদের কোনো দৃশ্যমান ভূমিকা নেই?

রাশেদ খান মেনন: সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি, স্থানীয় ইউনিটগুলো তাদের করণীয় ঠিক করবে। ইতোমধ্যে যেমন আমাদের দল বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনায় নৌকার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এখন আওয়ামী লীগ এটা গ্রহণ করবে কিনা, তা তাদের বিষয়। এটা আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করে।

  • আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। দেশের ভেতরে তো বটেই, আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নির্বাচন কেমন হবে– এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী এ বিষয়ে?

রাশেদ খান মেনন: আমি মনে করি, নির্বাচন ভালো হবে। আওয়ামী লীগ চাইছে তার গায়ে কোনো কালি না লাগাতে। আর নির্বাচনে সে জিতবে। বিএনপির হয়তো ভোট আছে, তবে সে ভোট বাক্সের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের শক্তি দরকার, তা এ মুহূর্তে তাদের নেই। আওয়ামী লীগ ভোট সুষ্ঠু করার চেষ্টা করবে।

  • আপনি বলছেন, ভোট অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে; অর্থাৎ বিএনপিকে নিয়েই?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি যদি না আসে, নির্বাচন বন্ধ রাখবেন আপনি? নির্বাচন তো হতে হবে।

  • কিন্তু দেশে-বিদেশে নির্বাচন নিয়ে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের বক্তব্য হলো– বিএনপি না এলে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বলা যাবে না।

রাশেদ খান মেনন: গেল না। তাতে তফাতটা কী হলো? তাতে কী আসবে-যাবে?

  • কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, বিএনপি নির্বাচন করবে।

রাশেদ খান মেনন: আমার ব্যক্তিগত ধারণাও তা-ই।

  • আপনারা নিজের প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলছেন। নির্বাচনের পর সরকারে অংশগ্রহণ নিয়ে কী কৌশল হতে পারে?

রাশেদ খান মেনন: সেটা তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী হবে; এখন বলা যাবে না।

  • কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সরকারে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের দলের মধ্যে বিতর্ক ছিল। হায়দার আকবর খান রনো তো এ প্রশ্নেই দল ছাড়লেন–

রাশেদ খান মেনন: রনোর বিষয়টা ঠিক বলছেন না। ২০০৬ সালে যখন নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, তখন রনোই ছিলেন পাইওনিয়ার। তিনি পার্টি ছেড়েছেন ২০০৮ সালে। তাঁর চিন্তার পরিবর্তন ঘটে ওয়ান-ইলেভেনের সময়। কেন করলেন, তা আজও জানি না। যদিও তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব এখনও অটুট। ২০০৮ সালে সিদ্ধান্ত ছিল– আহূত হলে আমরা সরকারে যাব। আবার আহূত হওয়ার পরও সরকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারব না বলে ২০১৩ সালে সরকারে যাইনি। এর পর সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ধ্বংসের মুখে বলে নির্বাচনকালীন সরকারে যাই এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সাল-পরবর্তী সরকারে অংশ নিই। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

  • সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এই সাক্ষাৎকার যেদিন প্রকাশ হচ্ছে, সেদিন আপনার জন্মদিন। আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।

রাশেদ খান মেনন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

(সাক্ষাৎকারটি দৈনিক সমকালে প্রকাশিত হয়েছে ১৮ মে, ২০২৩। সেখান থেকেই দৈনিক সোনালী সংবাদের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো।)

সোনালী/জেআর