সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়িতদের কোনো ধর্ম নেই: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িতদের কোনো ধর্ম নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করছে, তারা সব ধর্মেরই আছে। আসলে তাদের কোনো ধর্ম নেই।’
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করে যে, তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবে, তা কখনোই হবে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা বলেননি। আমাদের নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) তা বলেননি।’
শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হজ অফিসে ‘হজ কর্মসূচি ২০২৩’ (১৪৪৪ হিজরি) উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের (হজযাত্রীদের) ও আলেম-ওলামাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আমাদের শিশুরা এটি থেকে দূরে থাকতে পারে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এটি সর্বদা মানুষের কল্যাণের ধর্ম, যা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। কিন্তু অল্প কিছু মানুষই ইসলামের নিন্দার কারণ হয়ে উঠছে। এ জঘন্য কাজটি থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে আমাদের শিশুদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনাদের (হজযাত্রীদের) কাছে আমার সবচেয়ে বড় দাবি হলো- আপনারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন, যাতে তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের বাংলাদেশ ও এর জনগণকে মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনার আহ্বানও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটে। এখানে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও পরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে দেশের মানুষ অন্তত খাবার খেতে পারছে।’ দেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি।’
হাজিদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আল্লাহর মেহমান হিসেবে আল্লাহর ঘরের পাশাপাশি মক্কা-মদিনায় যাচ্ছেন। আমরা প্রার্থনা করি যেন আপনারা নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারেন। সেইসঙ্গে আপনারা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন।’
হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ চালু করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন হজের যাবতীয় কার্যক্রম যেমন প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্প ডেস্ক, কল সেন্টার, এজেন্সি প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট ই-হজ ব্যবস্থাপনার অধীনে করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৬১৩৬ নম্বরে কল সেন্টারের পাশাপাশি প্রতিটি হজযাত্রীকে এসএমএসের মাধ্যমে হজ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হজযাত্রীরা ডায়ালিং কলের মাধ্যমে সবকিছু জানতে পারছেন। হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছে সরকার, যা হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করেছে।’
এবারের প্রথম হজ ফ্লাইট শনিবার (২০ মে) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন।
করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন। মহামারি করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করেছিলেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, হাবিব হাসান, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুলাইহান, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম।
সোনালী/জেআর