ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৪ - ৫:২৯ অপরাহ্ন

সংঘাতে জড়াচ্ছে তৃণমূল আ’লীগ, ফিরছে না শৃঙ্খলা

  • আপডেট: Friday, May 19, 2023 - 4:19 pm

অনলাইন ডেস্ক: সামনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূলে ঐক্য নিশ্চিত করতে সচেষ্ট দলটি। গত বছরজুড়ে এজন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চষে বেড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বেশিরভাগ জায়গায় নতুন কমিটিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি তৃণমূলের কাঙ্ক্ষিত ঐক্য নিশ্চিত করতে পারেনি। নানা জায়গায় রয়ে গেছে গ্রুপিং-কোন্দল। যে কারণে প্রায়শই লিপ্ত হচ্ছে সংঘাতে। ঘটছে খুনের ঘটনাও।

গত বছরের শেষ দিকে ৩৯টি জেলা ও বিপুলসংখ্যক উপজেলায় সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। পরে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শেষ হলেও নতুন বছরের শুরুতে মাঠ দখলে তৃণমূলকে চার নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের দখলেই মাঠ। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত দলটি। প্রায়শই নিজ দলের কোন্দলে খুনের ঘটনা ঘটছে।

গত ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫ সহ মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার পর র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান ফয়সাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে বোরকা পরিহিত তিনজন গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় হত্যার দুদিন পর ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী।

নিহত জামালের পরিবারের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী মামলার ৪ নম্বর আসামি তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদার।

২ মে রাতে বরগুনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বশত্রুতার জেরে ইউপি সদস্য মোতাহার মৃধার নেতৃত্বে শফিকুল ইসলাম পনু নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত পনু বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পতাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য।

আয়লা পতাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন শানু বলেন, আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পনুকে ইউপি নির্বাচনের দ্বন্দ্বে পূর্বশত্রুতার জেরে তার প্রতিপক্ষ বর্তমান ইউপি সদস্য মোতাহার মৃধা তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। এর আগেও তারা পনুর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

২ মে উপজেলা পরিষদের ভেতরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে মারধরের পর পুকুরে ফেলে দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়ালসহ ১০-১২ জন। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

নাটোরে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. কবির বিন আনোয়ারের সামনেই আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিন (২ মে) দুপুরে শহরের কান্দিভিটু এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. কবির বিন আনোয়ার জেলা কার্যালয়ে স্মার্ট কর্নার উদ্বোধন করতে গেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল সমর্থকরা স্লোগান দেওয়া এবং আসনে বসাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এসময় তারা একে অপরের দিকে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।

একইদিন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উত্তর বাজারে পৃথক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

ময়মনসিংহ মহানগরীতে সালিশ চলাকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত হন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ আহ্বায়ক শ্রাবণ ও বাঁশবাড়ী কলোনির পুকুরপাড় এলাকার যুবলীগকর্মী গোপালের মারামারি হয়।

বিষয়টি মীমাংসার জন্য সেদিন সন্ধ্যায় কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন ও কাউন্সিলর আনিসুর রহমানসহ স্থানীয়দের নিয়ে সালিশ বসে। সালিশে শ্রাবণ ও গোপাল গ্রুপ উত্তেজিত হয়ে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে শ্রাবণ গ্রুপের আজমুন ও মাহমুদুল হাসান জয় গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া গোপাল গ্রুপের বাদল মিয়া নামে একজন আহত হন।

বরিশাল-গাজীপুরে বিভক্তি প্রকাশ্যে

বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ও তার ভাতিজা বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা পৃথকভাবে মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, সাদিক অনুসারীদের বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেছেন খোকন সেরনিয়াবাত। এর মধ্যদিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি।

এদিকে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মেয়রপ্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে ভোট চাইছেন।

রাজনৈতিক মাঠে দৃশ্যমান শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকা এবং টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এটি সমাধানে তারা সচেষ্ট, শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আসলে এটা খুব একটা জটিল ব্যাপার। কারণ, আমরা যতই দলীয় স্বার্থের কথা বলি। বাস্তবে নিজের স্বার্থটাই বড় করে দেখি। যেমন- নির্বাচনগুলোতে যখনই কেউ প্রার্থী দিতে চায় বা হতে চায়; তখনই আমরা দলীয় প্রার্থী দিতে গিয়ে অন্যকে পছন্দ করলেই দ্বন্দ্বটা তৈরি হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে আমরা নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূল থেকে নিয়ে সব ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছি যে, দলীয় স্বার্থটা নিজের স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখতে হবে। কিছুক্ষেত্রে আমরা সফল হচ্ছি। আবার কিছুক্ষেত্রে এরা শুনছে না।

অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয় বা তলে তলে বিপক্ষেও কাজ করা শুরু করছে। আমি এতে আমি হতাশ না। কারণ অনেক বড় দল। অনেক যোগ্য লোক। পর পর তিনবার ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেকেই খুব আগ্রহী দলের নেতৃত্বে যেতে। যেজন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি- আগামীতে দলের নিবেদিতপ্রাণ, চিহ্নিত নেতাকে পদ-পদবিতে আনতে।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু খেলা আছে। আবার দৃশ্যমান শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় আমাদের দলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

কোথাও কোথাও প্রতিযোগিতা কদর্য রূপ ধারণ করছে। আমরা তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা করা এবং বিরোধী পক্ষের কালো টাকার প্রভাব সম্পর্কে জেলা, উপজেলা নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিয়ত অনুরোধ করছি। আশা করছি, পরিস্থিতি নিম্নগামী হবে না। যেটুকু হয়েছে, সেটুকু যথাযথ আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ত্বড়িত গতিতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিতে পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আরও সংঘাত বাড়বে। জাগো নিউজ

সোনালী/জেআর