ঢাকা | নভেম্বর ১৬, ২০২৪ - ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

মহাবিপদ থেকে বাঁচল উপকূল

  • আপডেট: Monday, May 15, 2023 - 4:00 am

অনলাইন ডেস্ক: চোখ রাঙিয়েছে কয়েক দিন। ক্ষণে ক্ষণে বদলিয়েছে গতি। ‘মোকা’ ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে শক্তি। ঘূর্ণিঝড়টির প্রবল ক্ষমতা দেখে বিশ্বের সব আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাসে বড় ঝুঁকির তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। কেউ কেউ একে সুপারসাইক্লোনও বলেছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার নৌবন্দরকে দেখিয়ে যেতে বলেছিল ১০ নম্বর মহা-বিপৎসংকেত।

এমন আভাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ ছুটে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। গত রোববার শেষ রাতে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সেন্টমার্টিন স্পর্শ করে। রাতে ঝড়বৃষ্টি হলেও সকালের আলো ফুটতেই উবে যায় সব শঙ্কা। মোকার মূল কেন্দ্র সেন্টমার্টিন থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমারের দিকে। বাংলাদেশকে বাঁয়ে রেখে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে মিয়ানমারে।

কক্সবাজার উপকূল ছুঁয়ে গেলেও মোকার মূল ঝাপটা গেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে। অতি প্রবল এই ঝড়ের তাণ্ডবের পূর্ণ চিত্র পাওয়া না গেলেও দেশটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের কাছ দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রম করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার।

গতকাল রোববার রাতে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে মোকা। যাওয়ার পথে সেন্টমার্টিনে তাণ্ডব চালিয়ে গেছে; রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৭ কিলোমিটার। এতে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলেও প্রবাল দ্বীপের বাঁকে বাঁকে এখন মোকার ধ্বংসযজ্ঞ। টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপেও কিছুটা ছোবল বসিয়েছে মোকা। ‘অতিপ্রবল’ ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেখিয়েছিল ৮ নম্বর মহা-বিপৎসংকেত।

শেষ পর্যন্ত ঝোড়ো বাতাস চট্টগ্রামে খুব একটা লাগেনি। টেকনাফ আর সেন্টমার্টিন ছাড়া আর কোনো এলাকা থেকেই আক্রান্তের খবর আসেনি। ঢাকাও ছিল বৃষ্টিহীন। মোকা চট্টগ্রামে সরাসরি বিপদ না ঘটালেও এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় জনজীবন দুর্ভোগে পড়েছে। এতে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়ে যায় লোডশেডিং। বাসাবাড়িতে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় রান্না।

এদিকে আজ সোমবার থেকে নিয়মিত ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হবে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি ও বহির্নোঙর থেকে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া জাহাজগুলো সোমবার ভোরের জোয়ারে ফের জেটি ও বহির্নোঙরে ভিড়বে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

কেমন ক্ষয়ক্ষতি

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মোকার তাণ্ডবে কক্সবাজারে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে দুই হাজার ঘরবাড়ি।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শুধু সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনে ১০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে প্রধান সড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ দ্রুত স্বাভাবিক করা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে চিংড়ি মাছের ঘের, লবণের মাঠ ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, এবার লবণের বাম্পার ফলন হয়েছিল কক্সবাজারে। ৬০ হাজার একর জমিতে ৩৫ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেকে মাঠের সেই লবণ ওঠাতে পারেনি। মাছের ঘের ও লবণের মাঠও ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও আসেনি বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা পাঁচ বছরে যত দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি, এর মধ্যে এবারের ব্যবস্থাপনাটি ছিল সবচেয়ে ভালো।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বিদায় নিলেও টানা বৃষ্টিতে ভূমিধসের ভয় তাড়া করছে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গাদের। পাহাড়ের পাদদেশে বাস করা মানুষকে নতুন করে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রাণহানি না হলেও অনেক স্থানে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লন্ডভন্ড করে গেছে ঘূর্ণিঝড়টি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় আলগা হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মাটি। এতে করে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ছে। চট্টগ্রামে যারা পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছে, তাদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করছি আমরা।

সোনালী/জেআর