ঢাকা | নভেম্বর ১৫, ২০২৪ - ৩:৫৮ অপরাহ্ন

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত প্রথম ওয়ানডে, সরাসরি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা

  • আপডেট: Wednesday, May 10, 2023 - 2:22 am

অনলাইন ডেস্ক: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হলো। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ২৪৭ রানের লক্ষ্য দেয়। রান তাড়া করতে নেমে আয়ারল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ৬৫ রান না তুলতেই আসে বৃষ্টি। এরপর আর ম্যাচ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

এই ম্যাচের ফল না হওয়াতে আইরিশদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার জন্য পেরোতে হবে বাছাইপর্বর বাঁধা। ২-০ ব্যবধানে জিতলেও কোনো লাভ হবে না। ৩-০ ব্যবধানে জয় পেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে সরাসরি আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপের টিকিট পেতো। এদিকে অষ্টম দল হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট পেলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

চেমসফোর্ডে মঙ্গলবার (৯ মে) টস হেরে বাংলাদেশের ব্যাটিং খুব একটা ভালো হয়নি। থিতু হয়ে উইকেট ছুড়ে আসেন একের পর এক ব্যাটসম্যান। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর ৫ ব্যাটসম্যান ২০ ছুঁলেও ফিফটি করতে পারেন কেবল একজন। জন্মদিনে ৭০ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম।

৫০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান। আয়ারল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৫ করার পর বন্ধ হয় খেলা। আর শুরু হতে পারেনি। আর ৩.৩ ওভার খেলা হলেই ম্যাচে জয়-পরাজয় দেখা যেত। কিন্তু সেই সুযোগটি হলো না।
পরিত্যক্ত হয়ে গেল বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।

মেঘলা আকাশের নিচে যে আশায় টস জিতে বোলিং নেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি, তা পূরণ হয় দ্রুতই। প্রথম বল থেকেই দারুণ মুভমেন্ট পেতে থাকেন জশ লিটল। আয়ারল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে খেলে আসা বাঁহাতি পেসার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে দলকে সাফল্য এনে দেন প্রথম ওভারে। তার ১৪০ কিলোমিটার গতির ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে ঠিকমতো ব্যাট নামাতে পারেননি আইপিএল-ফেরত আরেক ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস।

তার প্রাপ্তি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম শূন্য আর চতুর্থ ‘গোল্ডেন ডাক। ’ লিটলের বলেই ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি আদায় করেন তামিম ইকবাল। পরের ওভারে দারুণ ড্রাইভে চার মারেন তিনি মার্ক অ্যাডায়ারকে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কও পারেননি টিকতে। অ্যাডায়ারের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন তিনি উইকেটের পেছনে (১৯ বলে ১৪)।

চার ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। সুইংয়ের প্রভাব কমাতে ক্রিজে বাইরে বেরিয়ে খেলার কৌশল নেন দুজন। বিশেষ করে সাকিব এই চেষ্টা করে যান বারবার। তাতে সফলও হন শুরুতে।

কিন্তু তার পতনও হয় এই পথে। গ্রাহাম হিউমের বলে বেরিয়ে এসে যেভাবে দৃষ্টিকটূভাবে ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড হন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার, মনে হচ্ছিল বুঝি ম্যাচ জিততে এক বলে চার রান প্রয়োজন বাংলাদেশের! এই নিয়ে ওয়ানডেতে সাকিবকে তিন ইনিংসে বল করেই তিনবারই আউট করেন হিউম।

৫২ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হয়ে এরপর অর্ধশত রানের জুটি গড়েন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। গত মার্চে আইরিশদের বিপক্ষেই অভিষেকে নজরকাড়া পারফর্ম করা হৃদয় এবারও আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন। সুইংয়ে যদিও একটু অস্বস্তিও ছিল তার। শান্তও কিছুটা ছিলেন নড়বড়ে। তবে এর ফাঁকে দারুণ কিছু শটও খেলেন তিনি। ৫০ রানের জুটি শেষে দুজনই বিদায় নেন আলগা শটে।

কার্টিস ক্যাম্পারের শর্ট বল সজোরে মারলেও সরাসরি মিড উইকেট সীমানায় ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন শান্ত। তার সম্ভাবনাময় ইনিংস থামে ৭ চারে ৬৬ বলে ৪৪ করে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের যে বল অনায়াসেই ছাড়া যায়, সেটিতেই ব্যাট পেতে দিয়ে ৩১ বলে ২৭ করে ফেরেন হৃদয়। ইনিংসের সেরা জুটি এরপরই পায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ যোগ ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৬৫ রান।

মুশফিক অবশ্য ১৯ রানে জীবন পান হ্যারি টেক্টর ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ায়। এছাড়া তিনি নির্ভরতায় এগিয়ে নেন দলকে। অফিসিয়াল বয়সে তার ৩৬ বছর পূর্ণ হলো এ দিন। জন্মদিনে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৬৩ বলে।

সাত নম্বরে মিরাজের ওপর যে ভরসা রাখছে দল, সেটির প্রতিদান দেওয়ার মতোই শুরু করেন তিনি। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই দৃষ্টিনন্দন দুটি বাউন্ডারি মারেন লিটলকে। এরপর দারুণ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।

শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের জুটি হিসেবে তাদের দুজনের কাছ থেকেই লম্বা ইনিংস ছিল দলের চাওয়া। মিরাজ ব্যর্থ হন সেখানেই। ইদানিং যিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে আয়ারল্যান্ড দলে খেলছেন, সেই জর্জ ডকরেল নিজের পুরনো ভূমিকায় গিয়ে ভাঙেন এই জুটি। দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ ক্যাচ দেন সুইপ খেলে (২৭ বলে ৩৪)।

এরপর আড়াইশ ছুঁতে মুশফিকের ব্যাটেই তাকিয়ে ছিল দল। ফিফটি পেরিয়ে তিনি এগিয়েও যান কিছুটা। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি তারও। শর্ট বল উড়িয়ে মারার চেষ্টায় যখন তিনি ফেরেন, ৫ ওভারেরও বেশি বাকি ইনিংসের। কিন্তু ব্যাটসম্যান নেই তখন একজনও। তাইজুল ইসলাম ৩৬ বল লড়াই করে ১৪ রান করতে পারেন। শেষ দিকে বিশাল এক ছক্কায় ১৫ বলে ১৬ রান করে দলকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান শরিফুল ইসলাম।

আয়ারল্যান্ডের রান তাড়ায় যথারীতি আগ্রাসী শুরু করেন পল স্টার্লিং। হাসান মাহমুদকে দুটি চার মারেন তিনি, পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন শরিফুলকে। তবে শরিফুলের পরের বলেই ক্যাচ দেন পয়েন্টে (১০ বলে ১৫)। পরের ওভারেই হাসারের দুর্দান্ত ইনকাটার উড়িয়ে দেয় অ্যান্ড্রু বালবার্নির বেলস। হাসান-শরিফুলের সঙ্গে ইবাদত হোসেনও আক্রমণে এসে আঁটসাঁট বোলিং করেন। তিন পেসারের দারুণ বোলিংয়ে উড়ন্ত সূচনা পায়নি আইরিশরা। তৃতীয় উইকেটে স্টিভেন ডোহেনি ও হ্যারি টেক্টর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন বটে। তবে যথেষ্ট দ্রুততায় তাদের রান তুলতে দেয়নি বাংলাদেশ। ৩৬ রানের জুটি আসে ৬২ বলে।

চতুদর্শ ওভারে বোলিংয়ে এসেই তাইজুল নিজের বলে ক্যাচ ছাড়েন টেক্টরের। ওই ওভারের শেষ বলে রান আউট থেকে রক্ষা পান ডোহেনি। নিজের বলে বলে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ডোহেনিকে (৩৯ বলে ১৭) ফিরিয়ে শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙেন তাইজুলই। একটু পরই বৃষ্টির হানা। ক্রমে বাড়তে থাকে তীব্রতা। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ইতি টানা হয় ম্যাচের। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ বৃহস্পতিবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪৬/৯ (তামিম ১৪, লিটন ০, শান্ত ৪৪, সাকিব ২০, হৃদয় ২৭, মুশফিক ৬১, মিরাজ ২৭, তাইজুল ১৪, শরিফুল ১৬, হাসান ৪*, ইবাদত ১*; লিটল ১০-০-৬১-৩, অ্যাডায়ার ১০-১-৪৪-২, হিউম ১০-০-৩২-২, ম্যাকব্রাইন ৫-০-২১-০, ক্যাম্পার ৮-০-৫০-১, ডকরেল ৭-০-৩২-১)।

আয়ারল্যান্ড: ১৬.৩ ওভারে ৬৫/৩ (ডোহেনি ১৭, স্টার্লিং ১৫, বালবার্নি ৫, টেক্টর ২১*, টাকার ২*; হাসান ৫-০-২১-১, শরিফুল ৫-০-২১-১, ইবাদত ৪.৩-০-১৫-০, তাইজুল ২-০-৫-১)।

ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ০-০ সমতা।

সোনালী/জেআর