শ্রমজীবীদের সঙ্গে প্রতারণার রাজনীতি বন্ধ করুন: বাদশা
স্টাফ রিপোর্টার: কৃষক শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে প্রতারণামূলক রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেছেন, ‘কৃষক শ্রমিকদের জোর দিয়ে বলা হয়; আপনারা উৎপাদন করুন, ফসল ফলান। কিন্তু কৃষক যখন ফসল উৎপাদিত করে তার নায্য মজুরি পায় না, তখন আমরা কেউই তাদের পাশে এসে দাঁড়াই না। শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার রাজনীতি চলতে পারে না। অবিলম্বে এটি বন্ধ করতে হবে।
সোমবার সকালে শহরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী জেলার উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশ শেষে লাল পতাকাসহ একটি র্যালি বের করা হয়। এতে এমপি ফজলে হোসেন বাদশাসহ ওয়ার্কার্স পার্টি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
শ্রমিক সমাবেশে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহীর কল-কারখানাগুলো বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করে দেয়া হয়েছে। যেদিন পাটকল বন্ধের ষড়যন্ত্র হয়, সেদিন শ্রমিকদের পাশে গিয়ে কেউ দাঁড়ায়নি। আমরা সেদিন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তাদের আন্দোলনে শামিল হয়ে রাজনৈতিক একাত্মতাও প্রকাশ করেছি।’
শহরের টানা তিন বারের এই এমপি বলেন, ‘রাজশাহীতে উন্নয়ন হয়েছে অনেক, কিন্তু যখন পাটকল-চিনিকল বন্ধ হয়ে যায়, শ্রমজীবী মানুষ কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে; মানবেতর জীবনযাপন করে, তখন কাউকে তাদের নিয়ে কথা বলতে দেখিনি। এসব নিয়ে আর নিন্দা জানাবো কার কাছে? নিন্দা জানাতে-জানাতে হাঁপিয়ে গেছি! পথ এখন একটাই- মহান মে দিবসে সবাইকে সংগ্রামের শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে হবে। রাজপথে লড়াই করেই নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক এই ভিপি আরও বলেন, ‘অনেকে কৃষকদের বেশি-বেশি উৎপাদন করার জন্য উৎসাহিত করেন। এটি খুব ভালো। স্বাগত জানাই। তবে, কৃষক যখন খুব ভালো উৎপাদন করে সেটির ন্যায্য মূল্য পায়না, তখন আমরা আর কেউই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই না। এর মানে হলো- উৎপাদন করেন আপনারা; খাবো আমরা। আমরা সবসময় গরীব মানুষকে শোষণ করতে চাই, লুণ্ঠন করতে চাই। যাদের রক্তে বাংলাদেশ, যাদের জন্য বাংলাদেশ, যে শ্রমজীবী মানুষ এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ; তাদেরই কোন রক্ষাকবচ নেই।’
রাষ্ট্র এক শ্রেণীর “লুটেরা গোষ্ঠীর” হাতে পুঞ্জিভূত মন্তব্য করে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান এ নেতা বলেন, ‘এখন দেখা যায়; তেল আলা মাথায় বেশি তেল দেয়া হয়। কিছু মানুষ রাতারাতি হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, আর আমাদের যারা ফসল উৎপাদনকারী শ্রমিক-কৃষক তারা গরীব হয়ে থাকে। তারা তাদের শ্রমের নায্য মূল্য পায় না। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। চালু থাকলেও ঠিকমতো মজুরি দেয়া হয় না। তাহলে আমরা কোথায় যাব? মুক্তিযুদ্ধ করেছি তবে কিসের জন্য? বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে কৃষক-শ্রমিকের বাংলাদেশ। তিনি বলেছিলেন, এ রাষ্ট্রের মালিক হবে জনগণ। কিন্তু রাষ্ট্রের মালিক কি আসলেই জনগণ? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বাংলাদেশ বিশেষ একটি লুটেরা শ্রেণীর হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে।’
মহান মে দিবসে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে লড়াই-সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় এই রাজনীতিক বলেন, ‘আমরা কি আজকে বড়লোক আরো বড়লোক হবে এই শপথ নেব, নাকি নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হব সেটি ঠিক করতে হবে। কৃষক, শ্রমিক, শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে শপথ নিতে হবে। আমরা স্লোগান দেই, দুনিয়ার মজদুর এক হও। কিন্তু বাস্তবে আমরা এক হই না। আজকে সারা বিশ্বে আমাদের মতো দলগুলো মহান মে দিবস পালন করছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আসুন, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে একটি সমতাভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একাত্ম হই।
জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে শ্রমিক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সাদরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম অপু সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন।
সোনালী/ জগদীশ রবিদাস