ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে তীব্র তাপদাহ, মারা যাচ্ছে মুরগি

  • আপডেট: Thursday, April 20, 2023 - 9:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: প্রকৃতিতে প্রচণ্ড দাবদাহ। ভেঙে যাচ্ছে গরমের যুগ যুগের রেকর্ড। দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পোলট্রি খামারিরা।

চারঘাটের বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার খামারের বিপুল সংখ্যক মুরগি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

খামারিরা এ জন্য দুষছেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২কে। কোনো প্রকার রুটিন কিংবা শিডিউল না করে দিন-রাত মিলে ৭-৮ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকা ক্ষতির বড় কারণ বলে জানিয়েছেন খামারিরা। এতে দুপুরের দিকে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে।

এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল। গত তিন দিন ৪২.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে। আগামী কয়েকদিন একই রকম আবহাওয়া বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪৮০টি পোলট্রি খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্রয়লার খামার রয়েছে ৪১০টি এবং লেয়ার ও দেশি মুরগির খামার রয়েছে ৭০টি। তীব্র লোডশেডিংয়ের ফলে প্রতিদিনই এসব খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। খামারের ওপর নির্ভরশীল অনেক খামারি তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিদ্যুতের বিকল্প জেনারেটর না থাকাসহ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খামারে ঢুকতে না পারাটা মুরগির হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেন, হিটস্ট্রোক কোনো রোগ নয়। গরমের হাত থেকে যদি মুরগিকে রক্ষা করা যায়, তাহলে হয়তো হিটস্ট্রোকে মুরগির মারা যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। এ ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ কিংবা চিকিৎসা দিয়ে মুরগি বাঁচানো সম্ভব নয়। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করলে মুরগি উৎপাদনে খরচ আরও বেড়ে যাবে।

উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের খামারি ওবাইদুর রহমান রিগেন বলেন, আমার খামারে ৫ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকা এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে গত ৬-৭ দিনে আমার প্রায় ১ হাজার মুরগি মারা গেছে। এ জন্য আমি মনে করি, লোডশেডিং সর্বোচ্চ দায়ী। যদি রুটিনমাফিক লোডশেডিং হতো, তবু আগাম ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো মুরগিগুলো বাঁচানো যেত।

শলুয়া ইউনিয়নের খামারি রাসেল মাহবুব বলেন, গত দুই দিনে হিটস্ট্রোকে আমার খামারের ৩৫টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজির উপরে। গরমের কারণে কোনোভাবেই হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।

চারঘাট উপজেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ১০-১৫ টাকা দামের মুরগির বাচ্চা ৬০-৬৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। খাবার কিংবা ওষুধ সবকিছুর দামই বেশি। এতকিছুর পর আবার হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে। জেনারেটর দিয়ে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে খামার বাঁচানো সম্ভব নয়। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন খামারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুরগি মারা গেছে।

লোডশেডিংয়ের বিষয়ে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর চারঘাট জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ৭০ হাজার গ্রাহকের জন্য আমাদের প্রতিদিনের বিদ্যুতের যা চাহিদা, তার মাত্র ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রধান সংযোগ লাইনও মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শুধু জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করা কঠিন। এ জন্য এমন স্থানে খামার তৈরি করতে হবে, যাতে সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে। এ ছাড়া তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করতে হবে। তাহলে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাওয়ার হার কমবে।

সোনালী/জেআর