ঢাকা | মে ৯, ২০২৫ - ১১:৫২ অপরাহ্ন

হাত ও পায়ের নখ উঠিয়ে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ

  • আপডেট: Friday, April 14, 2023 - 12:32 am

অনলাইন ডেস্ক: ‘আমাকে সব কাজে সময় বেঁধে দিত। সেই সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারলে রুটি বানানো বেলন, খুন্তি আর রেঞ্জ দিয়ে মারত। অনেক সময় রেঞ্জ-প্লাস দিয়ে হাত ও পায়ের নখ উঠিয়ে দিত। এভাবে আমাকে আট মাস ধরে নির্যাতন করা হচ্ছিল।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শুয়ে এসব কথা বলছিল আর অঝোরে কাঁদছিল এক শিশু গৃহকর্মী। ১৩ বছর বয়সী শিশুটি তার গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর অমানবিকতার শিকার হয়ে বুধবার মধ্যরাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছে।

জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে অভিযোগ পেয়ে যশোর শহরের ঘোপ নোয়াপাড়া রোডের একটি বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নির্যাতনের শিকার শিশুটির নাম ফিহা মনি। সে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মাঝপাড়া এলাকার প্রয়াত আবুল হোসেনের মেয়ে। ৯ মাস ধরে সে যশোর শহরের ঘোপ নোয়াপাড়া রোডে সরকার শামীম আহমেদ অংকুরের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করছিল। গৃহকর্তা শামীম সিনজেনটা কীটনাশক কোম্পানির সেলস ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।

পুলিশ জানায়, কয়েক বছর আগে ফিহা মনির বাবা মারা গেলে তার মা অন্যজনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে শিশুটি পার্শ্ববর্তী গ্রামে তার নানির বাড়িতে থাকত। পরে তার মায়ের পরিচিত শামীম তাঁর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ দেন ফিহাকে। ৯ মাস আগে শিশুটিকে যশোরে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর এক মাস তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হলেও পরে তাঁদের হিংস্র রূপ দেখানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায়ও ফিহাকে ছাদ থেকে কাপড় তুলে আনতে বলা হয়। একটু দেরি হওয়ায় তাকে রুটি বানানোর বেলন দিয়ে বেদম পেটানো হয়। এতে তার চোখে রক্ত জমে যায়। রেঞ্জ দিয়ে পায়ের নখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। চিৎকার করলে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছিল না সে। রাতে দরজা খোলার সময় পাশের বাসার একজন তাকে দেখে নির্যাতনের বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ সময় শিশুটির কাছ থেকে ঘটনা শুনে পুলিশে ফোন করেন ওই ব্যক্তি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শিশুটিকে বুধবার রাত ১টার দিকে ভর্তি করা হয়। ছোট্ট দেহটিতে অনেক নির্যাতন চালানো হয়েছে। দেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। চোখ, মাথা ও পায়ে জখম আছে। তবে এখন সে শঙ্কামুক্ত।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ফিহার ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে– বিদ্যুতের তার, রুটি বানানোর বেলন, চাবুক প্রভৃতি। শিশুটির সুচিকিৎসা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS