ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

২০৩০ সালের মধ্যে আসবে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ভ্যাকসিন

  • আপডেট: Sunday, April 9, 2023 - 12:19 am

অনলাইন ডেস্ক: ক্যানসারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের টিকা আবিষ্কারের সুখবর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে বাঁচবে লাখ লাখ জীবন। শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, এটি নিশ্চিত যে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার, অটোইমিউনসহ অন্যান্য রোগের জন্য টিকা প্রস্তত হয়ে যাবে।

এই টিকা নিয়ে গবেষণায় অসাধারণ ফল পাওয়া গেছে। কিছু গবেষক এর জন্য কভিড টিকার সাফল্যের কথা বলছেন। যেখানে ১২-১৮ মাসের মধ্যে ১৫ বছরের অগ্রগতি হয়েছিল।

ওষুধ কোম্পানি মডার্নার চিফ মেডিক্যাল অফিসার পল বার্টন বিশ্বাস করেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ‘সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রে’ পাঁচ বছরের মধ্যে চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবে। নেতৃস্থানীয় ওষুধ সংস্থাটি এর আগে করোনভাইরাসের টিকা তৈরি করেছে। এখন বিভিন্ন ধরনের টিউমারকে লক্ষ্য করে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরি করছে।

ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বার্টন বলছিলেন, তখন আমাদের কাছে অত্যন্ত কার্যকর ভ্যাকসিন হবে। কোটি কোটি না হলেও লাখ লাখ প্রাণ বাঁচবে। আমরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বিরুদ্ধে ক্যান্সারের টিকা দিতে সক্ষম হবো।

একাধিক শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ একটি ইনজেকশন দিয়ে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যা দুর্বল ব্যক্তিদের কভিড, ফ্লু ও রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) থেকে রক্ষা করবে। বর্তমানে কোনো ওষুধ নেই এমন বিরল রোগের জন্য ব্যবহার হবে এমআরএনএ থেরাপি ।

তিনি আরো বলেন, ১০ বছর পর আমরা এমন একটি বিশ্বে থাকব যেখানে আপনি সত্যিকার অর্থে রোগের জেনেটিক কারণ শনাক্ত করতে পারবেন। এমআরএনএ-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটি মেরামতও করা যাবে। তিনি বলেন, তবে এই টিকা করোনাভাইরাসের টিকার মতো সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহারযোগ্য হবে না। কারণ, এর দাম থাকবে অনেক বেশি। ফলে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর হার্টের সমস্যা ও ক্যান্সারের কারণে মারা যান বিপুল সংখ্যক মানুষ। বছরে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যান সেখানে এই দুটি রোগে। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে সব মৃত্যুর হিসাবে প্রতি তিনটিতে একটিরও বেশি।

অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানকে ড. পল বার্টন বলেছেন, আমাদের হাতে এই টিকা চলে আসবে এবং তা হবে উচ্চ মাত্রায় কার্যকর। এতে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। বহুবিধ ভিন্ন রকম টিউমার ক্যান্সারে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে।

ড. পল বলেন, কয়েক মাসে আমরা আরও কিছু জিনিস শিখতে পেরেছি। তা হলো- এমআরএনএ শুধু সংক্রামক ব্যাধির জন্যই শুধু ব্যবহার করা হয় অথবা শুধু কোভিডের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গবেষণায় তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বিষয়টি মোটেও তা নয়। তিনি বলেন, সব রকম রোগের ক্ষেত্রে এই এমআরএনএ ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে ক্যান্সার, সংক্রামক রোগ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, অটোইমিউন ডিজিজ এবং বিরল রোগ। তার ভাষায়, এর সব ক্ষেত্রেই আমরা গবেষণা করছি। তাতে চমৎকার ফল পাওয়া গেছে।

এই টিকা কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. পল। তবে আগের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, কীভাবে এমআরএনএ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করা হতে পারে। এমআরএনএ টিকা কোষের ভেতরে গিয়ে এক রকম প্রোটিন সৃষ্টি করে। তা কোভিডের মতো বিশেষ প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা উন্নত করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নির্দেশনা ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষেও কাজ হতে পারে। সেখানে ক্যান্সার সেলকে সতর্ক করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এবং আক্রমণ থামাতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত কারও দেহে এই টিকা দেয়ার আগে চিকিৎসকরা প্রথমে তার টিউমার থেকে বায়োপস্কি করবেন। তারপর ক্যান্সার কোষে এন্টিজেন শনাক্ত করবেন এবং এমআরএএ টিকার কোড নির্ধারণ করবে ওই কোষের জন্য। যেই কোড ওই ক্যান্সার কোষের ভেতরে একই এন্টিজেন সৃষ্টি করবে। চিকিৎসকরা এই টিকা তখন একজন রোগীর শরীরে প্রয়োগ করবেন, যাতে এন্টিজেন তৈরি হয়। এর বিরুদ্ধে সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

রোগ প্রতিরোধী কোষকে তারপর প্রশিক্ষণ দেবে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে দিতে। দেহে আর কোনো ক্যান্সার কোষ আছে কিনা তাকে খুঁজে ফিরবে সে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ক্যান্সারের বিভিন্নতা এবং রোগীর বিভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে এমআরএনএ টিকা প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এই টিকা হবে অনেক ব্যয়বহুল। বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে এমআরএনএ ক্যান্সার টিকা। সামনের কয়েক মাসে এর ফল পাওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ‘বিস্ময়কর থেরাপি’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে মডার্নার নিজের ক্যান্সারের টিকা।

তবে গবেষণায় যথেষ্ট বিনিয়োগ পাওয়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, কোভিডের কারণে গত তিন বছরে এ খাতে বিনিয়োগ অতিদ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তা বজায় রাখা না গেলে পুরো প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সোনালী/জেআর