র্যাব হেফাজতে মৃত্যু: হাইকোর্টের নির্দেশের অপেক্ষায় জেসমিনের স্বজনেরা
ডেস্ক: র্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৩৮) ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে হবে হাইকোর্টে। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট কী নির্দেশ দেন, সেই অপেক্ষায় আছেন জেসমিনের স্বজনেরা।
জেসমিনের মামা নজমুল হক মন্টু আজ রোববার বিকেলে বলেন, ‘আজ জেসমিনের কুলখানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আগামী ৫ এপ্রিল জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর হাইকোর্ট কি নির্দেশনা দেন, সে অপেক্ষায় আছি। তারপর পর আমরা মামলার সিদ্ধান্ত নেব।’ নজমুল হকের সন্দেহ, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে।
জেসমিনের মৃত্যুর পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন, প্রভাষক জামান নিশাত রায়হান ও মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তাঁরা মরদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করছেন। এর মধ্যে হৃদ্রোগে মৃত্যু হয়েছে কি না তা জানতে হার্টের পরীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। হার্ট পরীক্ষায় অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি বলে ল্যাব সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন নারী সহকারী কমিশনার জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। কিন্তু জেসমিনের শারীরিক অবস্থার অনেক কিছুই সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। ময়নাতদন্তের সময় মর্গে তা খেয়াল করেন সেদিন দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. তাজনীন জাহান। তারপর তিনিই বিভাগীয় প্রধানকে ডাকেন। তারপর বিভাগীয় প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন আরেক প্রভাষককে নিয়ে মর্গে যান এবং বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত করেন।
ডা. কফিল উদ্দিন আজ রোববার দুপুরে বলেন, সোমবারের মধ্যেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হতে পারে। প্রতিবেদন পুলিশকে দেওয়া হবে।
র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে নিয়েই র্যাব অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তাঁরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
এদিকে আটকের পর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। জেসমিনের মৃত্যুর পরদিন ২৫ মার্চ রামেকের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেসমিনের মরদেহ গোসল করানো হয় রাজশাহীতেই। পরে কাফন পরানো মরদেহ কফিনে করে নওগাঁয় নিয়ে যায় র্যাব। সেখানে র্যাবের উপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করেন স্বজনেরা।
জেসমিনের মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ। জেসমিন ও তাঁর কথিত সহযোগী আল-আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল-আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের ১১ জন সদস্যকে রাজশাহীতে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য আনা হয়। র্যাবের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। র্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার আজ রোববার দুপুরে বলেন, তদন্ত কমিটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। রোববারও তারা কাজ করেছেন। তদন্ত শেষে কমিটি ঢাকায় ফিরে র্যাব সদর দপ্তরে প্রতিবেদন দেবে।
এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত যুগ্ম সচিব এনামুল হক একটি প্রতারণা মামলার আসামি। চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে ঢাকায় ওই মামলা হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। এনামুল দাবি করছেন, জেসমিন তাঁর নামে প্রতারণা করতেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, জেসমিনের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল এনামুলের। জেসমিনকে আটকের আগেও তিনি নওগাঁয় গিয়েছেন। অন্য মোবাইল নম্বর থেকে তাঁদের কথাও হতো। গোয়েন্দা সংস্থা দুজনের কললিস্ট যাচাই করে দেখছে।
যদিও এনামুল হক দাবি করেন, জেসমিনকে তিনি আগে কখনো দেখেননি। তাঁদের পরিচয়ও ছিল না। জেসমিনকে আটক এবং তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী আজ রোববার দুপুরে বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন এসেছে। প্রতিবেদনটি এখনো পর্যালোচনা করে দেখা হয়নি। এটি না হওয়ার কারণে এখন গণমাধ্যমে বলার মতো কোনো কথা নেই।’ আজকের পত্রিকা
সোনালী/জেআর