ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ৪:৪০ অপরাহ্ন

কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রাজশাহী

  • আপডেট: Tuesday, March 28, 2023 - 12:08 pm
  • স্তব্ধ চারটি বড় কারখানা

জগদীশ রবিদাস: গত ১৪ বছরে বর্তমান সরকারের হাত ধরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে রাজশাহী নগরীতে। এখানে আছে একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্য যে কোন শহরের তূলনায় বেশ পিছিয়ে আছে রাজশাহী। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও আস্থাহীনতা। ফলে ক্রমশই প্রকট হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। বিশ্লেষকরা বলছেন, “শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সামাজিক অস্থিরতা রোধে পর্যাপ্ত নয়‌। এসব উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সামাজিক অস্থিরতা কমাতে হলে কর্মসংস্থান তৈরির কোন বিকল্প নেই। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই এখানে কর্মসংস্থান গড়ে না ওঠার অন্যতম কারণ।” তারা বলেছেন, এমন কর্মসংস্থান আমাদের গড়ে তোলা উচিত, যা এখানকার তরুণ-যুবকদের মধ্যে কার্যকর আস্থা তৈরী করতে পারে।”

ষাটের দশকে রাজশাহীতে সরকারিভাবে চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল এবং রেশমের মতো যে বড় চারটি শিল্প কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল- অবহেলা, লোকসানে সেগুলোও এখন স্থবির! এরপর তেমন আর ভারি কোন শিল্পকারখানা এখানে হয়নি। শিল্পায়নের দিক থেকে রাজশাহী বরাবরই থেকে গেছে অবহেলায়। এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা অন্য অঞ্চলে গিয়ে বিনিয়োগ করছেন। ফলে আশানুরূপ শিল্প গড়ে উঠতে পারছে না রাজশাহীতে। এতে অনেকটাই ফেকাসে চিত্র ব্যবসা-বাণিজ্যের। নির্বাচনের আগে বারবার কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা বাক্সে বন্দী। ফলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনসংখ্যা বাড়লেও রাজশাহীতে কাজের জায়গা বেশ সীমিত।

সম্প্রতি পাটকল রক্ষা করতে শ্রমিকদের আমরণ অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের কাঁতারে গিয়ে বসেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা

এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনার ঘাটতি ও তা বাস্তবায়নের আগেই ব্যক্তিলাভের মানসিকতাকে দায়ী করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ শফী উদ্দিন বলেন, কর্মসংস্থান একদিনে হয় না। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে। এখনো গড়ে উঠেনি, এটি দুর্ভাগ্য। কিন্তু এখানে এতদিন যে প্রকল্পগুলো নেয়া হলো, তার মধ্যে দিয়েই কেন কর্মসংস্থান গড়ে তোলা গেল না? যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প যখন পেশ করা হয়, তখন সেখানে উল্লেখ করতে হয়- এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান কতগুলো হবে আর পরক্ষ কতগুলো। এতো এতো উন্নয়ন প্রকল্প হলো, হচ্ছে। এতে তারা কি দিলেন? কি উল্লেখ করলেন? যে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা গেল না। এর পেছনের কারণ হচ্ছে, এখানে প্রকল্প বেচাকেনা হয়। বেশিরভাগ প্রকল্পই এখানে হয়ে থাকে, কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়ার জন্য। কর্মসংস্থান ও মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের বিষয়টি এখানে পুরোপুরি উপেক্ষিত। তাহলে কিভাবে এখানে কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে? গবেষক, সিভিল সোসাইটি, জনপ্রতিনিধি- আমরা কেউ এসব নিয়ে সেভাবে ভাবছি না।

একই প্রশ্নে উন্নয়ন কর্মী ও সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, বড়-বড় রাস্তা আর বিল্ডিং তোলার মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকছি। অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমাদের চলবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা কমাতে হলে কর্মসংস্থানের কোন বিকল্প নেই। রাজশাহীতে কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা যে হাইটেক পার্ক, সেটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেন বিনিয়োগ করে; এ বিষয়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। তা না হলে পার্কের যে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা কিন্তু ভেস্তে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকার এই হাইটের পার্কের লক্ষ্য যদি ভেস্তে যায়, তবে এর রেশ পরিশেষে সাধারণ মানুষকেই পোহাতে হবে।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও কেন রাজশাহীতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা গেল না; এ নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির অন্যতম পরিচালক সাদরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, একটি অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে গেলে যে আর্থসামাজিক পরিবেশ দরকার, তার কিছুই এ অঞ্চলে নেই। যেমন, রাজশাহীর যোগাযোগব্যবস্থা অপ্রতুল। সড়কপথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ট্রেন চালু আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। শুধু ব্রডগেজ লাইন আছে। বিমানে যাত্রী পরিবহন করা হলেও পণ্য পরিবহনের সুযোগ নেই। কারণ পণ্যবাহী কার্গো বিমান এখনো চালু হয়নি। সড়কপথে রাজধানী যেতে সময় লাগে সাত থেকে আট ঘণ্টা। রাজশাহীর কাছাকাছি যে বন্দরটি আছে, সেই সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এই অবস্থায় শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে কীভাবে?

এনিয়ে জিজ্ঞেস করলে সমাজকর্মী আহমেদ শফী উদ্দিন বলেন, শুধুমাত্র বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তা সঠিক নয়। আমাদের যতটুকু আছে এর মধ্যে থেকেই অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু রাজশাহীতে যতগুলো জনপ্রতিনিধি আছেন, কারো মধ্যে তেমন ইউনিটি ও সমন্বয় নেই। এর প্রভাব এখানকার কর্মসংস্থানের ওপর কঠিনভাবে পড়েছে। এক সময় শহরের অলিতে গলিতে যে রাস্তাগুলো তৈরি ও সংস্কার হতো, সেগুলোর কাজ লটারির মাধ্যমে দেয়া হতো। এনিয়ে সমালোচনাও হতো। কিন্তু দেখা যেত, এই কাজগুলো পেত স্থানীয়রা। তারা তো সেই অর্থ কানাডা বা বেগমপাড়ায় নিয়ে যেতে পারবে না। তাদের এখানেই বিনিয়োগ করতে হবে। এবং যখন এটি এখানে বিনিয়োগ হবে তখন অটোমেটিক্যালি এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে তার মধু মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে চলে যাচ্ছে। এরমধ্যে সিংহভাগই রাজশাহীর বাইরে। কাজেই পরিকল্পনা করার সময় খেয়াল রাখা উচিত “স্মল ইজ এ বিউটিফুল।”

এদিকে, স্বাধীনতার আগে রাজশাহীতে বৃহৎ চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠান- চিনিকল, পাটকল, টেক্সটাইল মিল ও রেশম কারখানা গড়ে তোলা হয়। ষাটের দশকে এসব কারখানা গড়ে উঠে পুরোপুরি সরকারি উদ্যোগে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরী হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র ভিন্ন! এক প্রকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান। লোকসানে পড়ে একের পর এক বিপর্যয় ঘটায় কাজ হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকে বেকার, অনেকে জড়িয়েছেন অন্য পেশায়।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে ২৫.৯৮ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের বিভিন্ন অংশ এখন ইজারা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইজারার টাকার ওপর ভর করেই এখন পরিচালিত হচ্ছে এক সময়ে উত্তরাঞ্চলে সুতার চাহিদা মেটানো টেক্সটাইল মিল। মিলের এখন নিজস্ব কোনো উৎপাদন নেই। মিলের ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিল ইনচার্জ রবিউল করিম জানান, এখন মিলের দেখাশোনার জন্য ৫ জন স্থায়ী ও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

রাজশাহীর ঐতিহ্যে মিশে আছে রাজশাহী সিল্ক (রেশম)। সুপ্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহীর আবহাওয়া রেশম চাষের জন্য অনুকূলে। রাজশাহী শহরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় রাজশাহী রেশম কারখানা। ৮০’র দশকের শেষ দিকে তিন হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে তুঁত চাষ হতো। মূলত এ সময়টিই এ অঞ্চলে রেশম উৎপাদনের স্বর্ণযুগ হিসেবে বলা হয়। কিন্তু এখন এখন আর সেই স্বর্ণযুগ নেই। ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে রেশম কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক।

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। এরপর আরো ১৪টি লুম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোট ১৯টি লুম নিয়ে রাজশাহী রেশম কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় উৎপাদন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে কারখানার আরও ২৩টি লুম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

রেশমের ইতিবৃত্ত নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, বিভিন্ন কারণেই ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প ঝুঁকিতে। তবে পরিকল্পনা নিলেই রেশমের ঐহিত্য ফেরানো সম্ভব। তামাক চাষের জন্য যেভাবে সহযোগিতা করা হয়, তার একাংশও যদি তুঁত চাষের ক্ষেত্রে করা হতো; তবে রেশম শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল। বর্তমান এ অঞ্চলে চুঁত চাষ যেভাবে কমে আসছে, সেখানে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখাটাই দুষ্কর। রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন উদ্যোক্তাদের সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে তুঁত চাষে উদ্বুদ্ধ করার বিকল্প নেই। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। সরকার সহযোগিতা করলে ঐতিহ্যবাহী রেশম অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।

রেশমকে বাণিজ্যিক শিল্পে পরিণত করতে করণীয় সম্পর্কে সিনিয়র এ সাংবাদিক বলেন, এর জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করতে হবে। প্রথমেই রাজশাহী থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু করতে হবে। এতে রেশমসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক সেক্টরেরও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিস্তৃত হবে। রাজশাহী থেকে পণ্যবাহী কার্গো বিমান চালুর দাবি অনেক দিনের। সেটিও চালু করা এই মুহূর্তে বিশেষ জরুরী। পদ্মা নদী ড্রেজিং করে নৌ-পরিবহন চালু করতে হবে। তাহলে রাজশাহীর রেশম সুতার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কাপড় বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে। এসব যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে অবশ্যই এদেশের রেশমশিল্প চীন ও ভারতের পরে অর্থাৎ- তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হবে।

এদিকে, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাজশাহী পাটকলও এখন মৃত প্রায়! ১৯৭২ সালে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালীতে চালু হয় রাজশাহীর একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন পাটকলটি। লোকসান দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই পাটকলটি বন্ধ করে সরকার। এতে কাজ হারিয়ে অসহায়ত্ব বরণ করতে হয় ১ হাজার ২০৯ জন স্থায়ী এবং ১ হাজার ৫০ জন বদলি শ্রমিককে। জুট মিলের ১০০ মৃত শ্রমিকের গ্র্যাচুইটি, পিএফ ও বিমার টাকা এখনো আটকে আছে। গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে চাকরি হারানো শ্রমিকরা কিছু টাকা পেলেও আগেই মারা যাওয়া ১০০ জনের পরিবার তাদের প্রাপ্য অর্থ এখনো পাননি। টাকা না পাওয়ার ক্ষোভে তাদের মাঝেমধ্যেই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করতে দেখা যায়।

ভালো নেই রাজশাহীর আরেক ঐতিহ্যবাহী কারখানা চিনিকল। এই চিনিকলে চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৫-৬৬ সাল থেকে। পরে ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। রাজশাহী অঞ্চলে আগে আখচাষির সংখ্যা বেশি ছিল। চিনিকলে আখ দিয়ে সময়মতো টাকা না পাওয়াসহ নানা কারণে কমতে থাকে চাষির সংখ্যা। সম্প্রতি ২০২০ সালের দিকে রাজশাহীসহ দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বিকেন্দ্রীকরণের কথাবার্তা শুরু হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহীর চাষিসহ চিনিকলের কর্মচারীরা এর বিরোধিতা করেন। ফলে কারখানাটি এখনো রাষ্ট্রীয় মালিকানাতেই চলছে। তবে চিনিকল চলবে-না বন্ধ হবে এমন খবরে চাষিদের অনিশ্চয়তায় ব্যাপকভাবে কমে আসে আখ চাষ। আখের অভাবে ২০২১-২২ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলটি চলেছে মাত্র ১৯ দিন। চিনিকলের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মাড়াই মৌসুম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহীতে সেভাবে কর্মসংস্থান গড়ে উঠেনি এটি সত্য। তরুণ-যুকদের বেকারত্ব, রাজশাহীর বিভিন্ন কল-কারখানা পুর্ণাঙ্গভাবে চালু করার করতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। এটি দুুঃজনক! রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি শিক্ষা গ্রহণ করে এই অঞ্চলে কাজ না পায়, তবে তারা রাজশাহীর প্রতি আস্থা হারাবে। যা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কর্মসংস্থান হয়নি তা সঠিক, তবে একেবারে হবে না; এই ধারণাও ভুল। রাজশাহীতে কৃষিপণ্য সবথেকে বেশি উৎপাদিত হয়। আমের উৎপাদনও এখন অনেক বেশি। এসবকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এতে আমরা জনপ্রতিনিধিরা বড় ভূমিকা রাখতে পারি। এ অঞ্চলে আমসহ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা হলে একদিকে স্থানীয় কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি অপরদিকে এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানেরও প্রসার ঘটবে।

বন্ধ কারখানাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনিয়র এই রাজনীতিক বলেন, সরকারি চারটি শিল্প কারখানাগুলোকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারখানাগুলোর বিপর্যয়ের পেছনে লোকসানের যে কারণ দেখানো হচ্ছে, সেই লোকসানের দায় শ্রমিকদের নয়। কতিপয় আমলা গোষ্ঠীর লুটপাট দুর্নীতি ও অপরিপক্ক পরিকল্পনাই এর প্রধান কারণ। কিন্তু এর সাজা তারা না পেয়ে পেতে হচ্ছে শ্রমিকদের। একের পর এক কারখানাগুলো বন্ধ করে শ্রমিকদের অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

বাদশা বলেন, আমি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার আগে এবং পরে, সবসময়ই বলে এসেছি; রাজশাহীর কর্মসংস্থানের জন্য এই চারটি কারখানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসদসহ রাজপথে বারবার দাবি জানিয়েছি, কারখানাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করার। রেশম কারখানাটিকে কোনভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি। বছর দু’য়েক আগে চিনিকল বন্ধের ঘোষণার বিরোধিতা করে শ্রমিকদের কাঁতারে বসে সেই সিদ্ধান্তও আটকেছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, এগুলোকে টিকিয়ে রাখার। কিন্তু সরকার খানিকটা নজর দিলেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কোনরকম বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়াই সরকারি উদ্যোগে যদি এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরিভাবে চালু করা যায়, তবে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের নতুন সূর্যোদয় খুব বেশি দূরে নয়।

সোনালী/জেআর