ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১:১৩ অপরাহ্ন

জাতীয় নির্বাচন: ৭০ থেকে ৮০ আসনে ভোট ইভিএমে

  • আপডেট: Thursday, March 16, 2023 - 2:32 am

অনলাইন ডেস্ক: ভোটের পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর্থিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক বিতর্ক সত্ত্বেও ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তে অটল তারা। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্র বাছাই, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনার জন্য প্রস্তাবনা তৈরির কাজেও হাত দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তিন ধাপে এসব সিটির ভোট হবে। প্রথমে গাজীপুর, দ্বিতীয় ধাপে খুলনা ও রাজশাহী এবং তৃতীয় ধাপে বরিশাল ও সিলেট সিটির ভোট হবে।

গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি কমিশনের সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি, পাঁচ সিটির ভোট, ইভিএম ইস্যু ছাড়াও প্রবাসীদের ভোটার করা নিয়ে আলোচনা হয়।

নির্বাচন নিয়ে সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার তাগিদ দিলেও সে পথে কেউই হাঁটছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গত মঙ্গলবার সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ইসির তরফে বলা হয়েছে, আইনের অধীনে থেকেই তারা আগামী সংসদ নির্বাচন করতে চায়। আর নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সংকট থাকলে সেটা রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেই সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসির কিছুই করার নেই।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে চায় ইসি। কমিশনের একাধিক সদস্য মনে করছেন, তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের নানা সমস্যা চিহ্নিত করছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই পাঁচ সিটির ভোটও তাঁদের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি।

পাঁচ সিটির ভোট সম্পর্কে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, পাঁচটি সিটি নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের আগে করতে হবে। আগামী এপ্রিলে পবিত্র রমজান মাস শেষে এসএসসি পরীক্ষা ২৩ মে পর্যন্ত; ২৯ জুন ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার আগে এবং এসএসসি পরীক্ষা শেষে– এই মধ্যবর্তী সময়ে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তপশিল ঘোষণা করা হবে।

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো সিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির পরবর্তী ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে ১১ মার্চ থেকে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। খুলনা ও রাজশাহী সিটির ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৩ এপ্রিল। ১০ অক্টোবরের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ দুই সিটিতে। আর ১৪ মে থেকে ১৩ নভেম্বর সময়ের মধ্যে বরিশাল সিটি এবং ৬ মে থেকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে সিলেট সিটির ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানিয়ে বলেন, ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যবর্তী সময়ে তিন ধাপে পাঁচ সিটির ভোট হবে। পাঁচ সিটির ভোটে ইভিএম ব্যবহার হবে। ইভিএম কাস্টমাইজ করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। তিন ধাপের নির্বাচনের মাঝে ১০ থেকে ১২ দিন গ্যাপ থাকবে। এই ভোটে সিসি ক্যামেরা রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংসদের ভোটে ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএম : আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রস্তাব স্থগিত হলেও আগের কেনা যন্ত্র ব্যবহারে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হচ্ছে ইসিকে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা। কারণ ইসির জন্য বরাদ্দ করা বাজেটে আগের কেনা ইভিএম মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া গেলে পুরোনো ইভিএম সংস্কার করে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ইসি-সংশ্লিষ্টরা। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, কমিশন সব সময় বলে আসছে, ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। শেষ পর্যন্ত কত আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সে সংখ্যা নির্ভর করবে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম মেশিনের ওপর। মেশিন যত আছে, সেগুলোকে সক্ষম; কতগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করতে পারব, তার ওপর নির্ভর করবে। ইসির কাছে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম আছে। আর মোট কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা অর্থপ্রাপ্তির পর চূড়ান্ত হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সেসব ইভিএম ফের সচল রাখতে বেগ পোহাতে হচ্ছে ইসিকে। ওই সময়ে একেকটি মেশিন কিনতে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা খরচ হয়। পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত্র হওয়ার পর এই দেড় লাখ ইভিএমের ৪০ হাজারই ব্যবহারের আগে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

কমিশনের গতকালের বৈঠকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রিটার্নিং কর্মকর্তা, সম্ভাব্য নির্বাচনে কেন্দ্রের সংখ্যা, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও ব্যয় বিভাজনের খসড়া, সংসদের ভোটে প্রযুক্তি ব্যবহারে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তুতি, স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি, নির্বাচনী বাজেট ও ব্যয় বিভাজন প্রস্তাব, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ইভিএম মজুত কার্যক্রম নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন ইসি সচিব।

ঈদের পর আবুধাবিতে এনআইডি কার্যক্রম শুরু : ঈদুল ফিতরের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে পরীক্ষামূলক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর আবুধাবিতে ইসির টিম গিয়ে কার্যক্রম শুরু করবে। ভোটার হতে আগ্রহীদের দূতাবাসে আউটসোর্সিংয়ের লোকবলের কাছে এসে তথ্য দিতে হবে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনলাইনে সংশ্লিষ্ট এলাকায়, উপজেলা বা থানা কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও অন্যান্য জিনিস নেওয়া হবে। ঢাকা থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হবে। সিস্টেমে ওকে হয়ে গেলে মোবাইল ফোন নম্বরে মেসেজ পাওয়া যাবে।

সোনালী/জেআর