ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১২:০০ অপরাহ্ন

বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে তদন্ত টিম, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত

  • আপডেট: Sunday, March 5, 2023 - 7:32 pm

অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় দ্বিতীয় দিন রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর গঠন তরা সাত সদস্যের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত করেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম অলমোস্ট শেষ। আর ফায়ার সার্ভিসের কাজ তারা ইতোমধ্যে শেষ করেছে।’

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।

বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাকিবুল হাসানসহ সদস্যরা। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে প্রতিটি দপ্তরে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে তদন্ত কমিটির মিটিং হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণের কিছু আলমত জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- ইয়ার সেফারেশন কলাম যেটি রয়েছে, সেখান থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এটার জন্য অধিকতর তদন্তের বিষয় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অক্সিজের বোতলের পাশে কার্বন ডাই-অক্সাইড সিলিন্ডারের বোতলও দেখেছি। কিন্তু এই বোতল রাখা তাদের অনুমোদন নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। আগামীতে এরকম দর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্ল্যান্ট চালানোর ক্ষেত্রে মালিক বা শ্রমিকদের কোনো গাফেলতি ছিল কি না তদারকি করা হচ্ছে। যদি গাফেলতির প্রমাণ মিলে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এখনও পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনা উদঘাটনে যতটুকু তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন তা জোগাড় হয়নি। নিহতের দাফন কাফন ও আহতদের চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্যার।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদীপ্ত কুমার, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, চট্টগ্রাম বিষ্ফোরক পরিদর্শক সহকারী এস এম শাখাওয়াত হোসেন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুভাংকর দত্ত।

অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক মোহাম্মদ মামুন উদ্দিন বলেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কারখানাটি দক্ষ জনবল দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। উৎপাদন হচ্ছে অক্সিজেন। আমাদের কোনো গাফেলতি ছিলো না। তবে কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা মহান আল্লাহ ভালো জানেন। দুর্ঘটনার পর থেকে আমরা আহত ও নিহতের খোঁজ খবর নিচ্ছি। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। শ্রমিক আইন ও সরকারি নীতিমালায় তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সরকারি প্রাপ্য ছাড়াও তাদের পরিবারকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি যে সব দপ্তর থেকে অনুমোদন প্রয়োজন হয় তা সব নেওয়া হয়েছে।

এ দিকে রোববার সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি টিম। পরিদর্শন শেষে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্ল্যান্ট থেকে যে কলামের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরা হয়, সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। অক্সিজেন ছাড়াও কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার দেখা গেছে। প্ল্যান্টের চারটি পয়েন্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ হয়নি।

সকাল সাড়ে ১১টায় কারখানায় আসেন প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অক্সিজেন রিফুয়েলিং প্ল্যান্টে কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র, সনদ রয়েছে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। যেসব ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমদ বলেন, বিস্ফোরণে ঘটনায় যদি মালিক বা শ্রমিক পক্ষের কোনো গাফেলতি পাওয়া যায় তাহলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।

সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড নামের প্ল্যান্টে শনিবার বিকেলে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৬ জন নিহত হন। আহত হয় অর্ধশত। বিস্ফোরণে প্ল্যান্টের আশপাশের এক বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে।

সোনালী/জেআর