ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১২:৫০ অপরাহ্ন

এমপি ফারুকের ভাতিজা পরিচয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

  • আপডেট: Wednesday, March 1, 2023 - 5:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্ত্রীসহ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার দড়িখরবোনা এলাকার সাদেকুজ্জামানের ছেলে নাহিদুজ্জামান পাপ্পু (৩০) ও তার স্ত্রী বাঁধন জামান (২৮)। দুইজনকেই বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্য নাহিদুজ্জামান পাপ্পু এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকাকানাধীন রাজশাহীর শপিংমল থিম ওমর প্লাজার প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

পাপ্পুকে গ্রেফতারের সময় তার স্ত্রী বাঁধন জামানকে বলতে শোনা যায়, ‘পাপ্পুর কোনো দোষ নেই। প্রতারণা করে উপার্জিত টাকার ৭০ ভাগই হাতিয়ে নিতেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।’ যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে অনেক আগেই পাপ্পুকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সে বিভিন্নজনের কাছে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়েছে জানার পর আর রাখা হয়নি। তার স্ত্রী কেনো এমন কথা বলছেন, সেটি তিনিই বলতে পারবেন।’

এর আগে মঙ্গলবার বিকালে প্রতারণার শিকার ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী নগরীতে পাপ্পুর বাসা ঘেরাও করে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ গিয়ে পাপ্পুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতে তার স্ত্রীকে একই অভিযোগে আটক করা হয়।

নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জনরোষ থেকে পাপ্পুকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। রাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পর বুধবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।’

ভুক্তভোগীরা জানান, পাপ্পু নিজেকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিতেন। তিনি এমপিকে দিয়ে চাকরি নিয়ে দেবেন এমন আশ্বাসও দেন। চাকরি দেওয়ার নাম করে ২৫ থেকে ৩০ জনের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কারও কপালে জোটেনি চাকরি। বরং পাপ্পুর কাছে টাকা ফেরত চাইলে উল্টো চাঁদাবাজির মামলার দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকি-ধামকি দিতেন।

তারা আরও জানান, টাকার জন্য চাপ দিলে কয়েকজনকে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ভুয়া ওই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিরস্থলে যোগদান করতে গিয়ে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন।

প্রতারণার শিকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে পাপ্পু আমাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে। এ জন্য আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেয়। চাকরি পাওয়ার পর আরও তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও আটজনের কাছ থেকে দুই লাখ করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু টাকা নেওয়ার দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও কাউকে চাকরি দিতে পারেনি পাপ্পু। একাধিকবার টাকা ফেরত চাইলেও টাকা দেয়নি। সম্প্রতি টাকা চাইতে গেলে আমাকে চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।’

চাকরি প্রার্থী ইমন আলী নামের একজন জানান, রেলে চাকরি দেওয়ার নামে তার কাছে থেকে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পাপ্পু। গত বছর তাকে রেলে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। রেলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও ১০ জনের কাছ থেকে এক কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুয়া নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়। আমরা ১০ জনই নিয়োগপত্র পাওয়ার পর চট্টগ্রাম রেলের দফতরে যাই যোগদান করতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, আমাদের নিয়োগপত্র ভুয়া। পরে আমরা ফিরে এসে পাপ্পুকে বিষয়টি জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান।’

পুলিশের এসআই পদে চাকরি নিয়ে দেওয়ার নামে ফায়সাল হোসেন নামের এক যুবকের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পাপ্পু। ফায়সাল জানান, ‘আমার সঙ্গে চুক্তি হয় ২০ লাখ টাকা। কিন্তু বছর গড়ালেও পুলিশের চাকরি পাইনি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি এমপির ভয় দেখান। হুমকি ধামকি দেন। আবার বলেন, এমপি টাকা নিয়েছেন তার কাছে গিয়ে টাকা ফেরত নেন।’

সোনালী/জেআর