াকা | এপ্রিল ২, ২০২৫ - :৩৪ পূর্বাহ্ন

অসুস্থ ছাত্রীকে হলে রাখতে গিয়ে অবরুদ্ধ রাবি ছাত্র উপদেষ্টা

  • আপডেট: Wednesday, March 1, 2023 - 8:32 pm

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অসুস্থ হওয়া সেই শিক্ষার্থীকে হলে রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নুর।

আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে সংগীত বিভাগের সভাপতির সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে হল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে হল থেকে বের করে আনে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রাধ্যক্ষের কক্ষে সভা চলাকালে সুমাইয়া সুলতানা নামের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই শিক্ষার্থীর নির্যাতনের অভিযোগের পর রাতে ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ভুক্তভোগী ও হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সুমাইয়া ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে আসেন। ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নুর তাঁকে নিয়ে বেলা তিনটার দিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে যান। হলে গিয়ে তিনি সংগীত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অভিযুক্ত নুরুন্নাহার দোলন ও ভুক্তভোগী সুমাইয়াকে ব্লক থেকে আলাদা হতে বলেন।

এতে নুরুন্নাহার আপত্তি জানান। ঘটনা জানতে পেরে সংগীত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শায়লা তাসমিন হলে যান। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা হল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে জড়ো হন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেল চারটার দিকে প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ঘটনাস্থলে যান। সাড়ে চারটার দিকে হলে যান দুই সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। তাঁদের অনুরোধে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ছাত্র উপদেষ্টা হল থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রক্টরের গাড়িতে তিনি প্রশাসন ভবনে আসেন। এ সময় গণমাধ্যমের সামনে তিনি কোনো কথা বলেননি।

সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলন বলেন, ‘উনি (ছাত্র উপদেষ্টা) হলে আসার পর আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। বিষয়টি আমি আমার বিভাগের সভাপতিকে জানালে তিনি হলে ছুটে আসেন। পরে তাঁর সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন ছাত্র উপদেষ্টা। এরপর আমরা তাঁর (ছাত্র উপদেষ্টা) বিচার চেয়ে অবস্থান নিই। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

সংগীত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শায়লা তাসমিন বলেন, ‘আমি হলে যাওয়ার পর ছাত্র উপদেষ্টা আমার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। আমি এখন একটি সভায় আছি।’ পরে বিস্তারিত বলবেন জানিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।

সহ–উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা গিয়ে এখন আলোচনায় বসবেন। এ ঘটনায় তদন্ত হবে। আগের গঠিত তদন্ত কমিটিও তাদের তদন্ত করবে। বিশ্ববিদ্যালয় নির্যাতনের জায়গা না। এটা শিক্ষা-গবেষণার জায়গা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে ছাত্র উপদেষ্টার অপসারণ চেয়ে সন্ধ্যায় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের ঘটনায় বিচার ও হলে ছাত্র উপদেষ্টাকে হেনস্তার প্রতিবাদে অবস্থান নেন।

সম্প্রতি বঙ্গমাতা হলে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুন্নাহার দোলন ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুলতানার কথা–কাটাকাটি হয়। বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালাকে জানান নুরুন্নাহার। পরে স্মৃতি বালা অন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সুমাইয়াকে ডাকলেও তিনি সাড়া দেননি। এ নিয়ে পরদিন হল প্রাধ্যক্ষের কাছে দোলন অভিযোগ দেন। হল প্রাধ্যক্ষ সুমাইয়াকে হলের অন্য ব্লকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটা মেনে নেননি। এ নিয়ে হলে দুটি পক্ষ তৈরি হয়।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দুই পক্ষের সভা ডাকা হয়। গতকাল সবাই উপস্থিত হলে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগ নেত্রী স্মৃতি বালা এবং সুমাইয়া ও দোলনকে নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই সভায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সুমাইয়া। পরে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথম আলো।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS