ঢাকা | নভেম্বর ১৮, ২০২৪ - ৮:৩৯ অপরাহ্ন

‘মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানকে খণ্ডবিখণ্ড করার সুযোগ দেওয়া হবে না’

  • আপডেট: Saturday, February 18, 2023 - 10:19 pm

ডেস্ক রিপোর্ট: মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়ে সেটিকে আর খণ্ডবিখণ্ড করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

তারা বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান; মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও আদর্শের বহিঃপ্রকাশ। এই সংবিধান প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের ইতিহাস। পূর্ণাঙ্গভাবে সেই সংবিধানে ফিরে যাওয়া এখন সময়ের দাবি। সংবিধানকে খণ্ডবিখণ্ড করার আর কোনো অপচেষ্টা হলে তা প্রতিহত করবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

শনিবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে দলের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে তাঁরা এসব কথা বলেন। এর আগে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য, পাকিস্তানের এনএসএফ কে মনে করিয়ে দেয়। শিক্ষার সর্বত্র নৈরাজ্য চলছে। এগুলো বাদ দিয়ে আসল শিক্ষায় আসেন। শুধু শিক্ষার মান নয়, নৈতিকতাও কমেছে। নতুন বই এসেছে। সেই বই নিয়ে চারিদিকে ‘রা-রা’ শুরু হয়ে গেছে। কারণ, সেখানে বিজ্ঞানের কথা, প্রগতি-অগ্রগতির কথা আছে। আর তারা দাঁড়িয়ে বলছে, এসব কিছু রাখা যাবে না। আর শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেছেন, ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। জনগণের উপর আস্থাহীনতা বা নির্ভর না করতে পারার কারণে সরকার পিছু হটছে। এটিকে ‘আত্মসমর্পন’ বর্ণনা করে শিক্ষামন্ত্রীর এই ‘পিছু হটাকে’ সমর্থন করেন না বলে জানান মেনন।

সমাবেশে ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে শিক্ষা নীতিকে ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন আওয়ামী জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী। বলেন, দুর্নীতি-বৈষম্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্য বাড়ায় মানুষের জীবনে অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষের এখন মূল প্রশ্ন আমরা বাঁচব কীভাবে? মূল্যস্ফীতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট; এমনকি আমরা যে রুটি দিয়ে নাস্তা করি, সেই গমেরও সঙ্কট। মানুষ প্রতি মুহূর্তে পথ খুঁজছে। কীভাবে বাঁচব, কীভাবে এগোব। মানুষের জীবনে এখন অস্থিরতা ও আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। অর্থপাচার, ব্যাংক লুটকারীদের বিচার ও শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেওয়ার বিকল্প নেই।

জোটের অন্যতম শরিক আওয়ামী লীগের উদ্দেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সামনে নির্বাচনের জন্য আপনারা ভোট চাইছেন। ভোট চান, আপত্তি নাই। তবে ১৪ দলের জন্য ভোট চাইতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আজকে মিত্রদের ঐক্যের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি, সেই বাঁধন শিথিল থেকে শিথিলতর হয়। মুখে কথা থাকে এক, কাজে সেটা মিলে না। কেবলমাত্র নিজেদের জন্য নয়, সেই ভোট চাইতে হবে ১৪ দলের জন্য, সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য। এই ঐক্যের প্রশ্নটি মীমাংসা হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করছি। এসময় বাংলাদেশে বিদেশিদের হস্তক্ষপের সমালোচনা করেন রাশেদ খান মেনন।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও পশ্চিমারা ভয়ানক পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারাই অস্ত্র সরবরাহ করছে। তাদের এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্যাট্রেজিতে বাংলাদেশকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। সে কারণেই তারা আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সংস্থাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যার বন্ধু তাদের শত্রু লাগে না। সরকারকে তাদের হস্তক্ষেপে আত্মসমর্পন না করার আহ্বান জানাই।

রাজশাহী-২ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এই এমপি আরও বলেন, আদিবাসীদের জীবন মান উন্নয়ন, চা শ্রমিকদের ন্যায্য মঞ্জুরি, কৃষক ও মেহনতী মানুষের অধিকার ওয়ার্কার্স পার্টি কাজ করে যাচ্ছে। ফজলে হোসেন বাদশা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের ‘নাক না গলানোর’ আহ্বান জানান।

সিলেট জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সিকান্দর আলীর সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মণ্ডলী সদস্য দীনবন্ধু পালের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হবিগঞ্জ জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জালাল উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শফিকুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক তাপস ঘোষ, সুনামগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক এটিএম কয়েস, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন রুমেল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী প্রমুখ।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস