ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ৭:২৫ অপরাহ্ন

লন্ডনের অভিজাত এলাকায় জমি-বাড়ির ক্রেতা বাংলাদেশিরাও

  • আপডেট: Sunday, January 15, 2023 - 2:59 pm

অনলাইন ডেস্ক: লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে আবাসন খাতে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও আগ্রহ বাড়ছে। ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনছেন। আর এই ধনাঢ্য বিদেশিদের তালিকায় ওপরের দিকে আছেন বাংলাদেশিরাও। ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ায় লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দামও বাড়ছে।

বিনিয়োগ কোটায় অভিবাসনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাসটনসের তথ্য অনুযায়ী, লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে অভিবাসন খাতের ক্রেতাদের ৪১ শতাংশই বিদেশি। এই বিদেশিদের কল্যাণে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলো বা প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের আবাসন খাতে ৩৩২ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, লন্ডনের নাইটসব্রিজ, মেফেয়ার, ওয়েস্ট ব্রম্পটন ও সাউথ কেনসিংটনের মতো এলাকাগুলো অভিজাত এলাকা হিসেবে বিবেচিত।

অ্যাসটনসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে সম্পদ কেনা বিদেশিদের তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান নবম। এক্ষেত্রে জাপানিদের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশিরা। ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বাংলাদেশিরা লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে মোট ১২ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ১২২ পাউন্ড মূল্যমানের সম্পদ কেনেন। মোট ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে এই সম্পদ কেনেন বাংলাদেশিরা। এসব লেনদেনে গড়ে ব্যয় হয় ১১ লাখ ৯০ হাজার ৪১১ পাউন্ড।

তালিকায় দশম স্থানে থাকা জাপানের নাগরিকেরা উল্লেখিত ৯ মাসে ৭৪টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে মোট ৯ কোটি ৩০ লাখ ১ হাজার ৭১৪ পাউন্ডের সম্পদ কেনেন।

যুক্তরাজ্যের রিয়েল এস্টেট ও প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্ক ও সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা অ্যাসটনসের তালিকা অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিকেরা। ২৯০টি লেনদেনের মাধ্যমে তারা লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে মোট ৩৬ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কেনেন, যা উল্লেখিত সময়ে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের মার্কেটে হওয়ার লেনদেনের ১১ শতাংশ।

অ্যাসটনসের এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন হংকয়ের ধনীরা। ২৪৩টি লেনদেনের মাধ্যমে তারা লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে মোট ৩০ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কেনেন, যা মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ। সমমূল্যের সম্পদ কিনে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। ২১৯টি লেনেদেনের মাধ্যমে ২৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫১ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কিনে চীনের নাগরিকেরা তালিকায় চতুর্থ স্থানে এবং ১৯৩টি লেনদেনের মাধ্যমে ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৩ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কিনে ভারতের নাগরিকেরা পঞ্চম স্থানে আছেন। এ ছাড়া ১৮ কোটি ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৮ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কিনে ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিকেরা যথাক্রমে তালিকায় ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩০ পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ কিনে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন।

লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলো ঘিরে ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহের কারণে এসব এলাকায় জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দামও বেশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর পাবলিক ডাটা বলছে, বিদেশি ক্রেতার আধিক্য লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে আবাসন খাতে সম্পদের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

অ্যাসটনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর্থার সারকিসিয়ানের মতে, ‘চলমান বৈশ্বিক মহামারির মাঝেও বিদেশি ক্রেতারা লন্ডনকে একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান হিসেবে দেখছেন। লেনদেনের মাত্রা ও বিক্রি হওয়া সম্পদের বিক্রয় মূল্য এটাই নির্দেশ করছে।’

এদিকে শুধু লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোই নয়, গত প্রায় এক যুগে যুক্তরাজ্যের পুরো আবাসন খাতেই বাংলাদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে সম্পদ নিবন্ধনের সংখ্যা যেখানে ২০১০ সালে ছিল ১৫টি, ছয় বছরে তা তিনগুণের বেশি বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৫২টিতে। পরবর্তী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০২১ সালে ১০৭টি পৌঁছায়।

সোনালী/জেআর