এক নিখুঁত নিশানাবাজ
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/12/alvarez-samakal-639a9e246ff50.webp)
অনলাইন ডেস্ক: ফুটবল এমনি, কেউ একের পর এক আক্রমণ করেও গোল পায় না, আবার কেউ একবারেই বল জালে। এই একবারে গোল করার জন্য হতে হয় নিখুঁত নিশানাবাজ। হয়তো সেটা অনেকই পারেন না, আবার অনেকের ক্ষেত্রে হয়েও ওঠে না। ২২ বছর বয়সী হুলিয়ান আলভারেজ কিন্তু অল্পদিনে তেমন কৌশলটা রপ্ত করে ফেলেছেন। রিভার প্লেট হয়ে ম্যানসিটিতে যাওয়া এই তরুণ মাতাচ্ছেন এবারের ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। মেসি-এমবাপ্পেদের মতো তারকাদের ভিড়ে তিনিও এখন গোল্ডেন বুটের দাবিদার। চার গোল করে যেন জানিয়ে দিয়েছেন সামনের ফুটবল বিশ্বে আসছেন রাজ করতে।
সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোলেও তাঁর নিশানা ছিল সুনিপুণ। প্রতিপক্ষের গোলমুখে দুটি শট নেন- দুটিতেই গোল। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও এক শটেই এক গোল আদায় করে নিয়েছিলেন। যদিও গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর নিশানায় কিছুটা গড়বড় ছিল। যে ম্যাচে পোলিশদের গোলমুখে ছয়টি শট নেন আলভারেজ। যার তিনটি যায় টার্গেটমতো। তবে পরিপূর্ণ নিশানা মতো একটি, যেটা বাড়িয়ে দেয় আর্জেন্টিনার ব্যবধান।
অনেকদিন পর এমন একজন নিশানাবাজকে পেল আর্জেন্টিনা। যদিও দলটির কোচ মানিক চিনতে একটু দেরিই করেছেন। বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে সেন্টার ফরোয়ার্ডে স্কালোনির পছন্দ ছিল লাওতারো মার্টিনেজকে। শুরুর দিকে তাঁকেই নামাতেন। কিন্তু অফফর্মের কারণে কক্ষচ্যুত হওয়া লাওতারোর জায়গাটাই নিজের করে নেন আলভারেজ। প্রমাণ করেন ওই পজিশনটা তাঁর হওয়ার কথা। যদিও স্কালোনি তাঁকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলিয়েছেন। কখনও সেন্টার ফরোয়ার্ডে আবার কখনও রাইট উইংয়ে, আবার লেফটে। তাতেও খেই হারাননি আলভারেজ।
তাঁর খেলার ধরন অনেকটাই ইউরোপীয়দের মতো। তিকিতাকা খেলতে পছন্দ করেন না তিনি। বল পায়ে দ্রুততম সময়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্স ভাঙতে চান। সে ক্ষেত্রে লং শটে আক্রমণ শানানো, আবার ট্যাকল করে বলটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে সুযোগ তৈরি করা- এভাবেই সাফল্যের দুয়ারে পা রাখেন। মাঠের আক্রমণভাগের সব বিভাগেই তিনি পারফেক্ট। যেমন সুপার ফিনিশার, তেমন দুর্দান্ত স্কোরার। পাসের কার্যকারিতার হারও অন্যদের তুলনায় বেশি। বল রিসিভ করা এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বল সতীর্থকে পাস দেওয়ার কাজটাও সুচারুভাবে করছেন আলভারেজ।
খুব বেশিদিন হয়নি এই আলভারেজকে চিনেছে বিশ্ব। রিভার প্লেটে থাকতে স্পাইডারম্যানের সাজে করতেন গোল উদযাপন। তার আগে মাদ্রিদেও কাটিয়েছেন মাস খানেক। বয়স যখন ১১ তখন মাদ্রিদে শিশুদের একাধিক টুর্নামেন্টে অংশ নেন, বল পায়ে নজর কাড়েন ক্লাবটির নীতিনির্ধারকদের। একটা আসরে সেরা গোলদাতাও হয়েছিলেন আলভারেজ। এরপর তাঁর সঙ্গে চুক্তি করতে উঠেপড়ে লাগে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় লা লিগার নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়তে হয় লস ব্লাঙ্কোসদের। আর আলভারেজও রিভার প্লেটে যোগ দেন।
সেখান থেকে তাঁকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানসিটি কিনে নেয়। মূলত দলটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলাই আলভারেজকে তুলে আনেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের বড় মঞ্চে। এখন আর তাঁকে পায় কে! ফুটবলের সবচেয়ে বড় মহারণ বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতাদের একজন তিনি। ১৮ ডিসেম্বর লুসাইলের ফাইনালে আরেকটা ঝলক দেখাতে চান এই আলভারেজ, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আসলে জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা ভালো খেলেই ফাইনালে গিয়েছি। এখন একটু বিরতি দিয়ে রোববার আরেকটা দারুণ ম্যাচ খেলতে চাই।’
সোনালী/জেআর