ঢাকা | এপ্রিল ২৬, ২০২৪ - ৯:২০ পূর্বাহ্ন

১০ ডিসেম্বর বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে: মালিক সমিতি

  • আপডেট: Thursday, December 8, 2022 - 5:55 pm

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা শহর, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সভাকক্ষে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বাস চলাচল কেমন হবে এ বিষয়ে এক জরুরি সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তবে বাস মালিকরা ওইদিন রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত করার দাবি জানিয়েছিল।

বৈঠকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কোম্পানির বাস মালিকরা বলেন, এর আগে বিএনপি জামায়াত নেতারা সড়কে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছিল। ওই আন্দোলনে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল। সেই ঘটনার ঝাঁজ এখনো আমাদের পোহাতে হয়। আমরা চাইনা পুনরায় সেই ঘটনাগুলো সাধারণ বাস মালিকদের সঙ্গে আবারও ঘটুক। আমরা আগামী ১০ তারিখ প্রতিটি বাস টার্মিনালে পাহারা বসাবো। সব ধরনের আপত্তিকর ঘটনা আমরা রুখে দেবো।

তারা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, নগরবাসী বর্তমানে আতঙ্কিত। আজকে সকাল থেকে আমরা বাসে যাত্রী পাচ্ছিলাম না। এত যাত্রী কম থাকলে আমাদের সারাদিনের বাস চালানোর তেলের টাকা উঠে আসবে না। এমন চলতে থাকলে আমরা ওইদিন বাস চালাতে চাই না। রাস্তায় পার্কিং করে রাখা সবকটি বাসের জন্য আমরা পাহারা বসাবো।

তবে এ কথার বিরোধিতা করে খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, যাত্রী থাকুক আর না থাকুক, গাড়ি চলবে। যদি গাড়িতে কেউ আগুন দেয় তবে তাদেরকে পিটিয়ে মারা হবে। আর এর দায়িত্ব নিবে মালিক সমিতি।

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, রাতে সব গাড়িগুলোকে একসঙ্গে রাখা পরামর্শ দিচ্ছি আপনাদের। সেখানে আপনারা রাত-দিন পাহারার ব্যবস্থা করবেন। যাত্রী নাই বলে রাস্তা থেকে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। আমি আপনাদের ওইদিন গাড়ি সচল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

সবশেষে সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ আবার বলেন, ১০ তারিখে গাড়ি চলবে। এবং সকল বাস টার্মিনালে সবাইকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক সময় টার্মিনাল গুলোতে শ্রমিকরা থাকলেও মালিকরা থাকেন না। সেটি এবার আর হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি টার্মিনালে মালিক শ্রমিকের ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনে আরও লোক জোগাড় করে ওইদিন টার্মিনাল গুলোতে পাহারা দিতে হবে। বাস অন রোড অবশ্যই রাখতে হবে।

এছাড়া ১০ তারিখে গাড়ি চলাচল যাতে কোন প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সভায় সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান টিবিসি রোড ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের মালিক শ্রমিক নেতাসহ ঢাকাস্থ্য সকল পরিবহনের প্রায় শতাধিক মালিক শ্রমিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মালিক সমিতির দুইজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল বুধবার জানিয়েছিলেন, ধর্মঘট ডাকতে সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা নেই। বিএনপির সমাবেশ আদৌ হবে কিনা, কোথায় হবে, তার ওপর নির্ভর করছে পরিবহনের কৌশল।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। নয়াপল্টন, আরামবাগ, মতিঝিল বা বিকল্প কোনো এলাকায় সমাবেশ করতে চায়।

পরিবহন মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি যে এলাকায় সমাবেশ করবে, সেই রুটে বাস চলবে না অথবা সমাবেশ এলাকায় এড়িয়ে চলবে। যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাসে করে কর্মসূচিতে যেতে না পারেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেছেন, বিএনপি তো ‘খেলা’ শুরু করে দিয়েছে। গতকাল (বুধবার) নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গাড়ি ভেঙেছে। তাহলে সমাবেশ এলাকায় কিভাবে বাস চলবে?

সূত্র জানিয়েছে, দুরপাল্লার বাস চলতেও বাধা থাকবে না। তবে কোনো মালিক বা পরিবহন কোম্পানি সমাবেশে যাওয়ার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের বাস ভাড়া দিতে পারবে না। ভাড়া দিলে সংশ্লিষ্ট মালিক ও কোম্পানিকে সাংগঠনিক শাস্তি দেওয়া হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জেলায় থেকে ঢাকায় আসতে না পারে, সেজন্য নগরীর সব প্রবেশপথে আওয়ামী লীগের কড়া পাহারা থাকবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বাস রিজার্ভ করে এলে, তা আক্রান্ত হতে পারে। তেমনটি হলে, সমিতি দায়দায়িত্ব নেবে না। ইতিমধ্যে মালিকদের এ বার্তা দেওয়া হয়েছে।

দুরপাল্লার রুটে বাসা চালানো হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, ধর্মঘটের নির্দেশনা পাননি। ৯, ১০ ডিসেম্বর স্বাভাবিক সময়সূচি মেনে বাস চলবে। তবে ওই দুই দিনের বাসের টিকিটের চাহিদা খুবই কম। ৮ ডিসেম্বরের বাসেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ঢাকায় আসছেন না।

মালিক সমিতির সূত্রটির ভাষ্য, ঢাকার অভ্যন্তরীন রুটের বাসের ক্ষেত্রেও একই ‘নীতি’ প্রযোজ্য হবে। মিরপুর এলাকার মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো বাসে সমাবেশের ব্যানার লাগিয়ে, স্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলে, সংশ্নিষ্ট কোম্পানিকে শাস্তি পেতে হবে। নগীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের পাহারা থাকবে। লোকাল বাসে সমাবেশগামীদের তোলা হলে বাধা দেওয়া হবে।

পরিবহন নেতারা জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হবে বলে কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশের সময় ধর্মঘট ডাকা হয়নি। রাজধানী ঢাকার ক্ষেত্রেও একই নীতি নেওয়া হয়েছে। পণ্যবাহী যান চলাচলে বাধা থাকবে না বিএনপির সমাবেশের সময়। তবে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। তা নিশ্চিতে ঢাকার চারপাশে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সাভারে পুলিশ, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পরিবহনের নেতাকর্মীরাও সড়কে থাকবেন। পন্যবাহী যানে যাত্রী তোলা হলে নামিয়ে দেওয়া হবে।

সোনালী/জেআর