রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে বিতর্কিতরা
অনলাইন ডেস্ক: ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব চায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে সংশয় হচ্ছে; বিতর্কিত নেতারাই নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি-সম্পাদক পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সিংহভাগ নেতারাই অছাত্র, বিবাহিত, ড্রপআউট কিংবা বিভিন্ন অপকর্মে ‘বিতর্কিত’। শুধু তাই নয়, অনেকের বিরুদ্ধে শিবিরের সঙ্গে গোপনে আঁতাতের অভিযোগও রয়েছে।
গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এমন নেতারা নেতৃত্বে আসলে এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের নেতার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে ছাত্রলীগ থেকে প্রগতিশীল ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব প্রয়োজন বলেও মত তাদের।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মাসের ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি উল্লেখিত হারে বেড়েছে। জুনিয়র কর্মীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়ার পর মহড়া দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসজুড়ে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন। শীর্ষ পদ বাগিয়ে নিতে প্রার্থীরা ধরনা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে।
রাবি ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত রাবির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন নেতা রাবি ক্যাম্পাসে এসে শীর্ষ দুই পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করবেন।
রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন। ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী লিংকন মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করেছেন। ছাত্রত্ব ধরে রাখতে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রীকে ভাগিয়ে বিয়ে করাসহ সংগঠনে কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে লিংকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিরোধীপক্ষ এসব ছড়াচ্ছে। আমি কখনো বিয়ে করিনি। তবে এক মেয়ের সঙ্গে ২০১৩ সালে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।’
শীর্ষপদের দৌড়ে আছেন রাবি ছাত্রলীগের উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়। অনার্স শেষ করেছেন। কিন্তু ছাত্রত্ব ধরে রাখতে মাস্টার্স শেষ করেননি।
কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফারসি বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী এনায়েত হক রাজুর মাস্টার্স শেষ হলেও শীর্ষ পদ পেতে চালাচ্ছেন লবিং-গ্রুপিং। তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাবি শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম ইমনের সঙ্গেও তার সখ্যের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিবিরের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক থাকার প্রমাণ কেউই দিতে পারবে না।’
আরেকজন উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব। তিনি বিভাগ থেকে ড্রপআউট। তার বিরুদ্ধেও কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে গালিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ছড়াচ্ছে।’ বর্তমানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি বলে দাবি তার।
নেতৃত্বের দৌড়ে থাকা আরেকজন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী শাহীনুল ইসলাম সরকার ডন। ছাত্রত্ব দেখানোর জন্য তিনি ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের জার্মান ভাষার শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আনার অভিযোগ রয়েছে। তবে ডন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষ গ্রুপের কেউ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রোগান্ডা ছড়াতে পারে।’
বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মিশু। নিজ বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হলেও তার বিরুদ্ধে হলে সিট বাণিজ্য, মাদক সরবরাহ, চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পাসে দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গণমাধ্যমের কাছে মিশুর দাবি, তার চতুর্থবর্ষ চলমান। তার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেন, তাদের কিছু অপকর্মের অভিযোগ তার দিকে এসেছে।
বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মেসবাহুল হক। দলের মধ্যে গ্রুপিং ও তার পরিবার বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে মেসবাহুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কেউ শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দিতে পারলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেব।’ রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ। পড়ালেখা শেষ করেছেন। ক্যাম্পাসে তার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
জানতে চাইলে ইমতিয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি একটা বিষয় ইম্প্রুভ রেখেছি। এখনো আমি ছাত্র। আমার বিরুদ্ধের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ ছাড়াও পদের দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত, নাট্যকলা বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী ও কমিটির সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মামুন ও শহীদ শামসুজ্জোহা হল সভাপতি চিরন্তন চন্দ্র চন্দ। তাদের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ।
এসব বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্মেলন উপলক্ষে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে বিবাহিত, অছাত্র, বয়স নেই; এমন কারও নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা নেতৃত্বে আসবে বলে আশাবাদী।’
সম্মেলন বিতর্কিত প্রার্থীদের বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যারা কাজ করবে তারাই নেতৃত্বে আসবে। বিতর্কিত, অছাত্র ও ড্রপ আউটরা কোনো ভাবেই নেতৃত্বে আসতে পারবে না সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ। তথ্য সূত্র: কালবেলা
সোনালী/জগদীশ রবিদাস