প্রশ্নফাঁসে বিমানের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত: ডিবি
অনলাইন ডেস্ক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জড়িত বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ইতোমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিমানের পাঁচ জুনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়ন্দা লালবাগ বিভাগ। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন, আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম।
এদিকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করেন- কীভাবে প্রশ্নফাঁস করবেন এবং কীভাবে সেগুলো বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন ৪-৫ জন মিলে প্রশ্ন ফাঁস করেন। পরে সেগুলো টাকার বিনিময়ে সরাসরি ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন।
প্রশ্নগুলো তারা সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন, যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দেবে। গ্রেপ্তারকৃতরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সে রহস্য উদঘাটনের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, এর আগেও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকার ভাগ তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছেন। এসব বিষয়ে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে। বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল প্রশ্নফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কীভাবে প্রশ্নফাঁস হলো- তা জানতে চাওয়া হবে।
চক্রটি এই প্রশ্নপত্র কতজনের কাছে বিতরণ করেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষে এ বিষয়ে আমরা সঠিক সংখ্যাটি জানাতে পারব। সংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা অভিভাবকদেরও বলেছিলাম- প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা তাদের চোখের সামনে এলে তারা যেন আমাদের জানায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কোনো অভিভাবক আমাদের তথ্য দেননি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কমিটির গাফিলতি, নাকি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে নিরাপদে পরীক্ষা হলে পৌঁছানো। একইসঙ্গে পরীক্ষাটি সম্পন্ন করা। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করব।
হারুন অর রশীদ জানান, আইন বিচার বিশ্লেষণ করে মামলা করা হচ্ছে- যাতে আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পান। আমরা প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার আরও গভীরে যাবো।