স্বপ্নপূরীতে আর আসবেন না স্বপ্নবাজ তরুণ শাহরিয়ার

তৌসিফ কাইয়ুম, রাবি: ‘এক বছর যাবৎ আমরা এক সঙ্গে থাকি। দুজনের একই সেশনের হওয়ায় সর্ম্পকটাও বেশ ভালো ছিল। সে সবসময় হাসি-খুশি ও প্রাণবন্ত ছিলেন। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। রাতের বেলায় অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতেন। সেই স্বপ্নবাজ শাহরিয়ার আর আমাদের স্বপ্নপূরী’তে ফিরবেন না। এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। শাহরিয়ার সম্পর্কে কথাগুলো বলতে গিয়ে গলার স্বরভারী হয়ে আসছিল তার রুমমেট আব্দুল মোত্তালেব ইমনের।
শাহরিয়ার রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। গত বুধবার রাত ৮ টার দিকে হলের তৃতীয় ব্লকের ৩য় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যায় মার্কেটিং বিভাগের এই শিক্ষার্থী। পরে আশঙ্কাজক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সহপাঠিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানান স্বপ্নবাজ এই তরুণকে। পরে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় দিনাজপুরের বিরল উপজেলার নিজবাড়িতে।
শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষটি তৃতীয় ব্লকের একদম পূর্বপাশে অবস্থিত। রুমের দরজায় বড় করে লেখা আছে ‘স্বপ্নপূরী’। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার রুমে গিয়ে দেখা যায়, চার বেডের এই কক্ষে মাত্র একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তিনিও নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে রুমে দরজা না লাগিয়ে নামাজে চলে যান তিনি।
এই কক্ষটি বেশ অগোছালো। বই খাতা এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। বিছানাগুলোও পরিপাটি নয়। রুমে প্রবেশের ডান পাশের বেডে থাকতেন শাহরিয়ার। তার বেডটি অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই অগোছালো। বিছানার চাদর একপাশ হয়ে আছে। বালিশ মোড়ানো মশারিও খোলা হয়নি এখনো। বিছানার ওপর রশি দিয়ে জামাকাপড় টানানো এলোমেলোভাবে। পাশে থাকা টেবিলটিও বেশ অগোছালো, শিটগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। টেবিলে থাকা ব্যাগের ওপর পলিথিন মোড়ানো পেয়ারা, পাশেই মানিব্যাগ দেখে মনে হতে পারে শাহরিয়ার এই মাত্র বাহিরে থেকে এসে রেখেছেন। পড়ার টেবিলে ঝুলানো একটি ছোট কাগজে লেখা রয়েছে , ‘ All my friends are toxic, all ambitionless, so rude and always negative. শাহরিয়ার যে স্বপ্নবাজ ছিলেন তারই প্রমাণ এই বাক্যটি।
মিনিট দশেক পর নামাজ শেষে রুমে আসলেন ওই শিক্ষার্থী। কথা বলে জানা গেল তার নাম ফরহাদ হোসেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয়েল ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ফরহাদ জানান, তিনি মাস খানেক আগে এই রুমে উঠেছেন। ফলে রুমের সবার সঙ্গে এখানো ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। ‘তবে শাহরিয়ার ভাই সব সময় হাসি খুশি ছিলেন। আমার খোঁজ খবর নিতেন। ঘটনার দিন বিকাল থেকে রুমে ছিল শাহরিয়ার ভাই। আমি সন্ধ্যার দিকে বের হই। পরে এসে আর দেখতে পাইনি।’
টেবিলের দিকে তাকিয়ে অনেকটা ভারীস্বরে ফরহাদ বলেন, ‘ভাই (শাহরিয়ার) বাইরে থেকে পেয়ারা এনে ছিলেন খাওয়ার জন্য। সেই পেয়ারা রয়ে গেল, অথচ ভাই আর নেই। এই পেয়ারা কে খাবে?’