ঢাকা | মে ৭, ২০২৪ - ২:২৬ পূর্বাহ্ন

শ্রদ্ধা ও ভক্তিকে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত

  • আপডেট: Monday, October 3, 2022 - 10:19 pm

স্টাফ রিপোর্টার: শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীতে শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা। নগরীর সাগরপাড়া এলাকার ত্রিনয়নী সংঘে প্রতিবছরের মতো এবারও পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর কুমারী পূজায় দেবীর আসনে বসানো হয়েছে নগরীর সাগরপাড়া এলাকার সাত বছরের ইন্দুপ্রভা দাস তিতলী। বগুড়ার ইউনিক প্লাস স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সে। তার মায়ের নাম ছন্দা সরকার ও বাবা স্বাগত দাস। গতবছরও তাকে কুমারীর আসনে বসানো হয়েছিল। পূজা শুরুর আগে তাকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে নানা অলঙ্কার ও ফুলের মালা দিয়ে নিপুণভাবে সাজিয়ে দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়।

এর আগে মন্ত্রোচ্চারণ, ফুল ও বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেয়া হয় ভক্তদের কাছে। এরপর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ভক্তদের উলুধ্বনি আর বিনম্র শ্রদ্ধায় সম্পন্ন হয় কুমারী পূজা।

ত্রিনয়নী সংঘের সাধারণ সম্পাদক অভি কুমার দাস জানান, কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। আমরা প্রতি বছর এই মন্দিরে কুমারী পূজা করে থাকি। এবারও এই কুমারী পূজা করা হয়েছে।

সনাতন ধর্ম মতে, দেবী মাতৃরূপে ভক্তদের মধ্যে আর্বিভুত হন। তিনি যেমন দুষ্টের দমন করেন, তেমনি মাতৃরূপে ভক্তের পালনও করেন। সেই ধারণাকে ধারণ করে কুমারী পূজার আবির্ভাব। কুমারী পূজায় সাত থেকে নয় বছরের কুমারীকে দেবী হিসেবে কল্পনা করে পূজা করা হয়। ভক্তরা তার মাঝে খুঁজে পান দেবীরূপী মাকে। পূজা শেষে সবার মঙ্গল কামনা এবং পাপমুক্তির জন্য ভক্তরা দেবীর পায়ে শ্রদ্ধা জানান ফুল ও বেলপাতা নিবেদন করে। বিভিন্ন মন্দিরে অঞ্জলী শেষে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

পুরাণ মতে, মুনি ঋষিরা প্রকৃতিকে নারীর সমান মনে করতেন। তাই কুমারী পূজা মাধ্যমে প্রকৃতিকে পূজা করতেন তারা। কারণ, তারা মনে করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বর।

বিশেষ করে যাদের মন সৎ, যারা নিষ্পাপ তাদের মধ্যেই ভগবানের প্রকট সবথেকে বেশি। এই গুণ কেবলমাত্র কুমারীদের মধ্যে থাকতে পারে, এই ভেবে তাদের দেবীরূপে পূজা করা হয়। দেবী পুরাণেও কুমারী পূজার উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্রমতে, এক থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত বালিকাদের কুমারী রূপে পূজা করা হয়।

নতুন বস্ত্র, ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের টিপ ও তিলক পরিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় কুমারীদের। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। তবে কুমারী পূজার জন্য সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের কন্যাকে মনোনীত করা হয়।

সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী, কোলাসুর কে বধ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কুমারী পূজার। গল্পে বর্ণিত রয়েছে যে, কোলাসুর যখন স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করেন, তখন কোলাসুর এর থেকে মুক্তি পেতে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারীরূপে কোলাসুর কে বধ করেন। এর থেকে মর্ত্যে কুমারীপূজার প্রচলন শুরু হয়।

সনাতন ধর্মে, সম্মানের দিক থেকে নারীকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। তাই শাস্ত্রকাররা নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এই পূজা করার কথা বলেছেন।

এছাড়াও এদিন, রাজশাহীর প্রতিটা মন্দিরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়েছে। এদিন বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সন্ধি পূজা। মহাঅষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতে মণ্ডপগুলোতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।

রাজশাহীতে এ বছর ৪৫০টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। রাজশাহী মহানগরীতে আছে ৭৬টি মণ্ডপ ও জেলায় ৩৭৪টি। প্রতিটা মণ্ডপে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে মণ্ডপের নিরাপত্তায়। প্রতিটা মণ্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে।