ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৭:০৬ পূর্বাহ্ন

বাতাসে মায়ের আগমনী সুর

  • আপডেট: Thursday, September 22, 2022 - 11:59 am

অনলাইন ডেস্ক: শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। কাশবনে বাতাসের দোল। শিশির ভেজা শিউলি, দূর্বাঘাসে বিন্দু বিন্দু শিশিরের স্পর্শ। সবখানেই যেন এখন মায়ের আগমনী সুর। মাত্র আট দিন, তারপরই বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু। তার আগে আগামী রোববার মহালয়া, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।

এখন চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। মাটির প্রলেপের ওপর রংতুলির ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছেন মা দুর্গা। দশভুজা নিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশে আবারও মর্ত্যে আগমন ঘটবে মহামায়ার। দুর্গাপূজা সামনে রেখে রাজধানীর পুরান ঢাকায় চলছে উৎসবের আমেজ। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগের মতো বিশাল পরিসরে উদযাপনের প্রত্যাশা ভক্তদের।

পূজা উদযাপনে ভক্তকুলে দেখা মিলেছে মহাব্যস্ততার। পুরান ঢাকায় বিভিন্ন পূজা উদযাপন কমিটি, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিমা শিল্পীদের নেই ফুরসত। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই প্রতিমা শিল্পীদের। সাধারণত পূজার চার মাস আগে থেকে তাঁদের প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাত জেগে কাজ করছেন তাঁরা।

সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপিত হওয়া পুরান ঢাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, পাটুয়াটুলী, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, গোয়ালনগর, বাংলাবাজার জমিদারবাড়ী, গেণ্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার অলিগলিতে চলছে পূজা উদযাপনের আয়োজন। সেখানে ছোট-বড় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শুরু হয়েছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ নির্মাণের কাজ। পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় মণ্ডপের পাশে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। পাশাপাশি দেখা গেছে আয়োজকদের ব্যস্ততা।

দুর্গাপূজার প্রধান উপকরণ হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা। সঙ্গে থাকেন অসুর ও গণেশ। বাংলাবাজারের মৃৎশিল্পী বলাই পাল জানান, পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন তিনি। তাঁর পূর্বপুরুষরাও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চুক্তি ও মজুরি দুভাবেই প্রতিমা তৈরি করেন। তবে মজুরির চেয়ে প্রেম ও ভক্তির বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পায়। প্রতিমা বানাতে প্রয়োজন হয় পরিমাণ মতো কাঠ, বাঁশ, তারকাটা, রশি, খড়কুটো, এঁটেল ও বেলে মাটি, রং, ধুতি, চুল ও হাতিয়ার।

আবার শুধু খড়কুটো ও মাটি দিয়েও করা যায়। সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার প্রতিমা তৈরি করেন তিনি। তবে উচ্চতা ও মানভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। এ বছর ২০টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি। এর মধ্যে ১২টির কাজ করেছেন বিভিন্ন মন্দিরে। চাহিদা অনুযায়ী ক্যাটালগ দেখে, আবার কখনও নিজের মতো করে প্রতিমাগুলো তৈরি করেন। ক্যাটালগ দেখে করতে পরিশ্রম একটু বেশি হয়। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে এখন চলছে রং-তুলির কাজ।

তবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যাপকভাবে কারিগর সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান মৃৎশিল্পে আন্তর্জাতিক পদক পাওয়া শাঁখারীবাজারের প্রাচীন প্রতিমাশিল্পী হরিপদ পাল। সমকালকে তিনি বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজে এখন খরচ বেশি, মুনাফা কম। এ শিল্পে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ একেবারেই নেই। ফলে কারিগর সংকট অনেক বেশি। আবার প্রতিমা তৈরির উপকরণগুলোর দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ। সেই অনুযায়ী মূল্যায়ন নেই। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় ঝুঁকছে কম।

এবার ঢাকা মহানগরে ২৪১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগর দক্ষিণে ১৫৪টি ও উত্তরে ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি পূজা হবে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানায়। এখানে মোট পূজার সংখ্যা ২৫টি। রাজধানীতে পূজা উদযাপনের সার্বিক বিষয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ সমকালকে বলেন, মহানগরে প্রতিটি পূজা মন্দিরে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। কয়েকটি মন্দিরে সামান্য কাজ বাকি আছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে।

চলতি বছর শাঁখারীবাজারে ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির মধ্য দিয়ে পূজার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিমা তৈরি শেষে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন পুরোহিতরা।

শাঁখারীবাজারের পুরোহিত সুকুমার চক্রবর্তী জানান, পূজা করতে মোট ১০০টি উপকরণ প্রয়োজন পড়ে। শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও শাঁখারীবাজার থেকে এসব উপকরণ জোগাড় করেন।

সরেজমিন শাঁখারীবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুর্গাপূজায় ব্যবহূত এসব উপকরণ বিক্রির জন্য রাস্তার ধারে ও গলিতে ছোট ছোট পসরা বসেছে। সেখানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ কিনছেন উপকরণ।

সোনালী/জেআর