ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১:১৪ অপরাহ্ন

আগ্রাসী হয়ে উঠছে মিয়ানমার

  • আপডেট: Wednesday, September 21, 2022 - 11:55 am

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। যতই দিন গড়াচ্ছে ততোই আগ্রাসী হয়ে উঠছে মিয়ানমার। শুরুতে তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি করলেও এবার নতুন নতুন সীমান্ত এলাকায় বাড়ছে তাদের উসকানি মূলক কর্ম তৎপরতা। যদিও মিয়ানমারের উসকানির ফাঁদে পা দেবে না বলে বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ঢাকা। এদিকে মিয়ানমারের গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারা।

তুমব্রু বাজার ও পশ্চিমকুল এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়ার ওপাড়ে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুরাইট পাহাড়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা। একাধিক সীমান্তচৌকি বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে। সেখান থেকে পূর্বদিকে তাক ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক মর্টারশেল।

মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ছয়টা। পাহাড়ের ফাঁক গলে আলো পড়তে শুরু করেছে সীমান্তঘেষা জমিতে। কৃষক হামিদ হোসাইন তার ধানক্ষেতে নিড়ানি দেয়া শুরু করেছেন মাত্র। ঠিক তখনই মর্টার শেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে পুরো তুমব্রু সীমান্ত এলাকা। এভাবেই নাইংক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত জুড়ে থেমে থেমে পুরোদিন ছোড়া হয় (মিয়ানমার থেকে) মর্টার শেল ও আর্টিলারি গোলা। এদিন নতুন করে উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তেও মর্টারশেল আর গুলির শব্দ শোনা গেছে।

তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় সরেজমিনে অবস্থান করে দেখা গেছে, ভোর থেকে ২০-৩০ মিনিট পর পর মর্টার শেল ও কামানের গোলা ছোড়ার শব্দ ভেসে আসছিলো তুমব্রুর মিয়ানমার প্রান্ত থেকে। গোলাগুলির বিকট শব্দে কাঁপছে এপাড়ের তুমব্রু বাজার, পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, খিজারীঘোনা, ভূমিহীন পাড়াসহ আশপাশের ১৫ গ্রাম।

তুমব্রু বাজার ও পশ্চিমকুল এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়ার ওপাড়ে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুরাইট পাহাড়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা। একাধিক সীমান্তচৌকি বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে। সেখান থেকে পূর্বদিকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক মর্টারশেল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু রাইট পাহাড় থেকে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত অসংখ্য গুলির পাশাপাশি থেমে থেমে ছোড়া হয়েছে অন্তত ৩০টি মর্টার শেল। মর্টার শেলের বিকট শব্দে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু পশ্চিমকুল, পূর্ব তুমব্রু বাজার, ক্যাম্পপাড়া, কোনারপাড়া, খিজারীঘাটা, ভূমিহীনপাড়াসহ অন্তত ১৬ গ্রামের ঘরবাড়ি কাঁপছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, গোলার বিকট শব্দে তাঁদের ঘুম ভাঙছে। গোলাগুলির শব্দ এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে উপর্যুপরি গোলা বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অপরিচিত কাউকে তুমব্রুসহ আশপাশের এলাকায় যেতে দেয়া হচ্ছে না, তল্লাশি করা হচ্ছে স্থানীয়দের বহনকরা গাড়িগুলোও।

অন্যদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ির পর এবার কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালী সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠল। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তঘেঁষা এপারের মানুষের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তে বসবাসকারীরা ভারী অস্ত্র ও গোলার শব্দ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের বরাতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, ‘তুমব্রুর পর এবার উখিয়া পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের মানুষজন যাতে ভয় না পায়, সেজন্য বোঝানো হচ্ছে। বিষয়টি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।’

সীমান্তে মিয়ানমারের এ আগ্রাসী মনোভাবের জন্যে একাধিকবার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই মিয়ানমার আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খোরশেদ আলম। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের (আসিয়ান কূটনীতিকদের ছাড়া) সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা এ ব্রিফিংয়ে শান্তি বজায় রেখে মিয়ানমারের ফাঁদে পা না দেয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন উপস্থিত কূটনীতিকরা।

রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং এটি তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

তবে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কোনো প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেননি। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করতেই মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়। মিয়ানমারের উস্কানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না।

বাংলাদেশে মর্টার শেল নিক্ষেপের জন্য মিয়ানমার আরাকান আর্মি ও এআরএসএকে দায়ী করছে, এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সবসময়ই একই দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের (কূটনীতিকদের) সাহায্য চেয়েছি, যাতে মিয়ানমার এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে।

এর আগে, ১৯ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মিশন প্রধানদের ব্রিফ করেন এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খোরশেদ আলম।

সোনালী/জেআর