বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করেই ভাইয়ের মামলা
অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত যুবদল কর্মী শাওন প্রধান বিএনপির ছোড়া ইট-পাটকেল ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতেই নিহত হয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন নিহতের বড় ভাই মিলন হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে মিলন হোসেন বিএনপির অজ্ঞাত ৫০০ মামলাটি করেন। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শাওনের দাফন শেষে মামলাটি হয়েছে। মামলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইট ও গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে তার ভাই মারা গেছেন বলে বাদী উল্লেখ করেছেন।
মামলার এজাহারে বাদী মিলন হোসেন উল্লেখ করেন, আমার ছোটভাই শাওন নবীনগর বাজারে শহীদুলের ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সোয়া ১০টায় ওয়ার্কশপের মালামাল ক্রয় করার জন্য বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। পরে দুপুর ১টার দিকে মোবাইলে সংবাদ পাই, আমার ভাই শাওনের লাশ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মর্গে আছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে এসে আমার ভাইয়ের লাশ দেখে শনাক্ত করি। প্রত্যক্ষ সাক্ষী ও স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টা হতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৫ হাজার জনের মতো নেতা-কর্মী ইট-পাটকেল, লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
আমার ভাই বেলা পৌনে ১২টায় দুই নম্বর রেলগেইট এলাকার পাকা রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ করতে থাকলে উক্ত অবৈধ অস্ত্রের গুলি ও ইটের আঘাতে আমার ভাই শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ রাস্তার লোকজন আমার ভাইকে গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার ভাইকে মৃত ঘোষণা করে।
এজাহারের শেষ অংশে বাদী উল্লেখ করেন, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আনুমানিক ৫ হাজার জনের মতো নেতা-কর্মী পুলিশের উপর ইট-পাটকেল, ককটেলের বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করার সময় আমার ভাই শাওন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিক্ষিপ্ত ইট ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির আঘাতে মাথায় ও বুকে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শহরের ডিআইটিতে মিছিলে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় নিহত শাওন প্রধান (২০)। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগরের প্রয়াত সাহেব আলীর ছেলে।
পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শাওন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। অপরদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, সক্রিয় কর্মী শাওন বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিকালে ময়নাতদন্তের পর রাত সাড়ে ১২টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় তাকে দাফন করা হয়। তারপরই নিহতের ভাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে শাওনের বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সহানুভূতি প্রকাশের সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে যুবদলের কর্মী বলেই উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করেন, তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন মিথ্যাচার করছে।