কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমছে শিক্ষার্থী
অনলাইন ডেস্ক: কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। তারা বলছেন তিন বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল-কলেজগুলোতে অনেক আসন খালি থাকছে। নানা সংকটসহ বয়সের সময়সীমা কমানের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে ২৪তম জাতীয় সমম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইডিইবি নেতৃবৃ্ন্দ।
লিখিত বক্তব্যে আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ বলেন, ২০৩০ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ২৫ কোটি হবে। যার মধ্যে প্রায় ১২ কোটি কর্মক্ষম মানুষ কর্মবাজারে প্রবেশ করবে। এ বিশাল কর্মক্ষম মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে কৃষি জমি মাত্র ৮৮ লাখ হেক্টর। এই স্বল্প ভূমির দেশে প্রতিবছর ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট, বিনোদন রিসোর্ট, ইটভাদা ও অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর মূল্যবান কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে কৃষি জমি শেষ হওয়ার শংকা রয়েছে। তখন ব্যাপক জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তিনি আরো বলেন, সরকার কৃষি জমি রক্ষায় আইন করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তার উপরে দিন দিন অপরিকল্পিত পানি ব্যবহার মাত্রাতিক্তি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানিরস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সেখানে পানিতে আর্সেনিক ও আয়রন মিশ্রণ উঠছে। নদী নালা, খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাধারাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি স্বল্পতার কারণে কৃষি কাজে অনেক ব্যঘাত ঘটছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে বর্তমানে যা কর্মসংস্থান রয়েছে, সেটিকে তিন গুণ করাসহ জ্বালানি সংকট উত্তরণের উপায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন, ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, কৃষি জমি রক্ষা ও জীন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় অপচয় রোধ, সমুদ্র সম্পদের আহরণ ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের ব্যবহার করতে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
ডিপ্লোমা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমস্যা তুলে ধরে বলা হয়, দেশের সব প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। পলিটেকনিকের ৭৭৭জন স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষকদের রাজস্বখাতভুক্ত, কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অসম্মানজনক পদোন্নতি প্রথা বন্ধ করে উচ্চ পদে বেতন স্কেল প্রদান, এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষকদের প্রদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি ও জাতীয়করণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি শিক্ষক (কারিগরি) পদকে স্থায়ী পদ করা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সম্মানজকন বেতন ও পদমর্যাদা নির্ধারণের দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইডিইবির সধারণ সম্মাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, ২৪তম জাতীয় সম্মেলনে জাতীয় সমৃদ্ধি ও কর্মস্থানের জন্য উদ্যোগত্বা উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আগামী দিনের জন্য মানুষের খাদ্য, কর্মসংস্থান, ভূমি স্বল্পতায় খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানি সংকটের আশঙ্কা করা হয়েছে। এসব সমাধানে নানা দিক তুরে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে কারিগরি শিক্ষার প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীর আসন খালি থাকছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছরের কোর্স শিক্ষামন্ত্রী তিন বছর করার প্রস্তাব রেখেছেন। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। এটি বাস্তাবয়ন হলে দেশ-বিদেশে কারিগরি শিক্ষার মান আরো কমে যাবে। শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. এ কে এম আব্দুল মোতালেব, মো. মোকলেসুল রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, কামরুজ্জামান নয়ন প্রমুখ।