প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও ফাঁস
![](https://sonalisangbad.com/wp-content/uploads/2022/08/Untitled-1-copy-88.jpg)
অনলাইন ডেস্ক: উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ অফিসে বসেই প্রকাশ্যে ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এক মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ শিক্ষকদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। এরপর গুনে গুনে ঘুষের টাকা বুঝে নিচ্ছেন। সেই টাকা নিজের প্যান্টের পকেটে পুরছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য বরাদ্দ এসেছে দুই লাখ টাকা করে। রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ ৯৯টি বিদ্যালয় পেয়েছে ৪০ হাজার টাকা করে। স্লিপ বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে পেয়েছে ২১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব টাকা ৩০ জুন ২০২২ সালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের হিসাব নাম্বারে পাঠানোর কথা।
বরাদ্দের টাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে আসার তিন দিনের মধ্যে সব বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে স্থানান্তরের সরকারি নির্দেশ রয়েছে। বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বর পরিচালিত হয় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে। কিন্তু ডিমলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ সরকারি সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে গত ৩০ জুনের মধ্যে একটি বিদ্যালয়ের টাকাও ছাড় করেননি। ওসব টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখেছেন তিনি। টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নেয়ার পর প্রধান শিক্ষকদের খবর দিয়েছেন টাকা তুলে নেয়ার জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি শর্ত দেন, মেরামত কাজের জন্য ৮৮টি বিদ্যালয়কে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। পাশাপাশি স্লিপের টাকার চেকের জন্য বিদ্যালয় প্রতি ৫ হাজার টাকা, রুটিন মেইনটেন্যান্স চেকপ্রাপ্তির জন্য বিদ্যালয় প্রতি ৬ হাজার করে টাকা দিতে হবে। সে অনুযায়ী উপজেলার ২১৭টি প্রাথমিক স্কুল থেকে মোট ২০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ।
শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ সরাসরি প্রধান শিক্ষকদের ফোন করে নিজ অফিসে বসে ঘুষের এসব টাকা নেন। প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিক্ষকদের সঙ্গে ঘুষ নিয়ে ফোনে কথোপকথনের বেশ কিছু কল রেকর্ডও প্রকাশ পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, যেসব বিদ্যালয় ঘুষ দিতে অস্বীকার করছে, তাদের টাকা আটকে রাখেন শিক্ষা কর্মকর্তা। ঘুষ ছাড়া বিল তো দূরের কথা, একটা কাগজও সই করেন না তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ট্রেজারি ও অডিট শাখায় কিছু টাকা দেয়া লাগে। হিসাবরক্ষণ অফিস আর অডিট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া হয়েছে। ঘুষ লেনদেন অনেক আগে থেকেই চলমান। আমি হুট করে কি এটাকে বন্ধ করতে পারি? বিভিন্ন খাতে ঘুষ দিতে হয়, এ টাকা কি আমি আমার বেতন থেকে দেব?’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সোনালী/জেআর