ঢাকা | মে ১৫, ২০২৫ - ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

জমে উঠেছে নদীতে ভাসমান পাটের হাট

  • আপডেট: Sunday, August 28, 2022 - 10:51 pm

 

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে: পাটের সুদিন আবারও ফিরে পেয়েছে সিরাজগঞ্জের কৃষকেরা। অতীতে পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। পরবর্তীতে এর মূল্য না পেয়ে কৃষকরা এই সোনালী আঁশের আবাদ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। বর্তমানে দাম ভালো পেয়ে আবারও পাটের সুদিন ফিরে এসেছে।

পাটের সুদিনে জেলার কৃষকরাও পাট চাষে নেমেছেন। আর এই পাট বিক্রির জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হাট। এরই অংশ হিসাবে সিরাজগঞ্জের যমুনা বেষ্টিত কাজিপুরে যমুনার চরে নাটুয়ারপাড়াতে জমে উঠেছে নদীতে ভাসমান পাটের হাট। আর এই হাটে কাজিপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলা থেকে কৃষক ও ব্যাপারীরা এসে পাট ক্রয় বিক্রয় করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ টি উপজেলায় এবছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে। চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে তোষা পাট ১১ হাজার ৭৭০ হেক্টর, মেস্তা পাট ৫৩৫ হেক্টর, দেশি পাট ১ হাজার ৫০ হেক্টর। জমি থেকে পাট কাটা ও ধোয়ার পর শুরু হয়েছে পাট বাজারজাতকরণ। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাটুয়াপাড়া হাটে যমুনা নদীর পাড়ে নৌকার উপরে জমে উঠেছে সোনালী আঁশ পাট বেচা-কেনা ।

কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের জমিতে উৎপাদিত পাট বিক্রয় করতে এবং আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে এ হাটে নিয়ে আসে পাট চাষিগণ। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। যমুনা নদীর পাড়ে উপজেলার চরাঞ্চলে একমাত্র নাটুয়াপাড়া হাটটি সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও বুধবার ভোরে পাটের হাট বসে। যমুনা চরে পাটের উৎপাদন ও মান ভালো হওয়ায় ব্যাপারী ও ক্রেতাদের হাঁক ডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রতি মন পাট ২৫শ’ থেকে ২৬শ’ টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নৌকা করে জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাংগাইলের ভুয়াপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয় করতে ব্যাপারীরা আসে এ হাটে। দাম ভালো থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।

সরিষাবাড়ি উপজেলার পাটের ব্যাপারী আবু তাহের জানান, পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা হয় ও পরিবহন খরচ কম। প্রতি হাটে তিনি ৪০-৬০ মন পাট নৌকা থেকে ক্রয় করে থাকেন। চরগিরিশের সোলেমান ব্যাপারি বলেন, অন্য হাট থেকে পাট কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি। তিনি প্রতি হাটে ৬৯-৭০ মন পাট ক্রয় করেন।

নাটুয়ারপাড়ার কৃষক আব্দুর হাদিউদজ্জামান বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বন্যায় ডুবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবুও বিক্রি করে বেশ দাম পেয়েছি।

এলাকাবাসি জানান, পাট কিনতে টাংগাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুংগামারি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে অনেক পাইকার পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে ১ থেকে ২ হাজার মন পাট ক্রয়- বিক্রয় হয়।

নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, এ হাটে কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে পাইকাররা আসে। প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মন পাট ক্রয়- বিক্রয় করে। এবারের পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি।

কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম জানান, এ বছর বন্যার কারণে পাটের আশানুরূপ ফলন হয়নি। হাটে ২৫শ’ থেকে ২৬শ’ টাকা মন দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এবছর বিঘা প্রতি গড়ে ৭/৮ মন পাটের ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জামালপুর জেলার লোকজন এই হাটে পাট বেচা কেনা করতে আসেন।

 

 

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS