ঢাকা | সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ - ৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

ঘোষণা ছাড়াই অটো চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

  • আপডেট: Sunday, August 28, 2022 - 11:08 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রাজশাহীর সড়কে ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালক ও মালিকরা। অটোর ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে রোববার ভোর থেকে অটো চলাচল বন্ধ রয়েছে। চালক ও মালিকদের দাবি সর্বনিম্ন অটোর ভাড়া ১০ টাকা করতে হবে। অটোরিকশা মালিক সমিতি বলছে, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না এবং কারা এসব করছে তাও তারা জানে না।

মহাসড়কে অটো বন্ধের দাবিতে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গত শনিবার দুপুর থেকে তারা অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট করছে। তারা বলছেন, অটোরিকশা চলাচলের কারণে বাস ও ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়ছে।

এদিকে ঘোষণা ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রিকশা ও ভ্যান চালকসহ গুটিকয়েক অটোচালক যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হঠাৎ ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিকল্প যান হিসেবে নগরীতে ভ্যানে করে অধিকাংশ যাত্রীদের গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে দেখা গেছে। নগরবাসী দাবি করছেন, রাজশাহীতে টাউনসার্ভিস বাস দিলে অটোরিকশা চালকদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যকর্মী জলি খাতুন নগরীর টুলটুলি পাড়ায় অবস্থিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্দেশে রাস্তায় বের হয়ে বিপাকে পড়েন। রাস্তায় কোন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা না দেখে তিনি অবাক হন। হাতেগোনা যে দুই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে তাদের একটিতে চড়তে গেলে তার কাছে ভদ্রার মোড় থেকে রেলগেটের ভাড়া চাওয়া হয় বিশ টাকা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই ভাড়া পাঁচ টাকা। জলিকে বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়ায় অফিসের উদ্দেশে রওনা হতে হয়।

নগরীর বিনোদপুরের বাসিন্দা রাহাত জানান, অটো না থাকায় তিনি ভ্যানে করে বিনোদপুর থেকে রেলগেটের উদ্দেশে রওনা হন। রিকশায় তার কাছে ভাড়া চাওয়া হয়েছে ১০০ টাকা। যা স্বাভাবিক অবস্থার চাইতে দ্বিগুণেরও বেশী।

কাটাখালী এলাকার বাসিন্দা রাশেদ জানান, সাহেববাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অটোরিকশা না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন তিনি। অনেক কষ্টে সাহেববাজারে এসে পৌঁছান। তিনি বলেন, নগরীতে স্বল্প পরিসরে হলেও ইন্টারসিটি বাস সার্ভিস চালু করা জরুরি। ব্যাটারিচালিত অটো এবং রিকশাগুলো রাজশাহী নগরীতে একদিকে যেমন যানজট সৃষ্টি করছে অন্যদিকে যখন তখন তাদের এরকম ভাড়া বৃদ্ধির অযৌক্তিক দাবিতে বিপাকে পড়ছেন নগরবাসী।

মিফতাহুল মিষ্টি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার বদলে মিনি বাস, সিটিং সার্ভিস নামানো হোক। এতে সময় বাঁচবে খরচও কম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে কিছু অসাধু অটোরিকশা চালক রাজশাহীর সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। তারা রাজশাহীর মানুষের সম্মান রাখেনি।

এদিকে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে অটোরিকশা চালকরা। সকাল ১০টার দিকে সাধারণ চালক ও মালিকদের ব্যানারে নগরীর রেলগেট এলাকায় সমাবেশ করেন তারা। পরে সেখান থেকে গিয়ে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।

অটোরিকশা চালক ও মালিকরা দাবি করছেন, এখন সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আবার নগরীতে অটো চলে পালা করে। ফলে চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তারা ভাড়া ন্যুনতম ১০ টাকা চান। ভাড়া না বাড়লে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মোমিন বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলেন। অটোরিকশা চলাচল শুরু করে আজ সোমবার তারা যেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। অটোরিকশা চালকেরা জানান, সোমবার তারা মেয়রের সাথে বসবেন। তবে অটোরিকশা ভাড়া বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শহরে এখনও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ আছে।

অটোরিকশার ভাড়া কমানোর দাবিতে রাবির প্রধান ফটক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, অটোরিকশা চালকরা ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়া তারা কেউই নিচ্ছে না। তারা দাবি করেন, দ্রুত অটোরিকশার ভাড়া কমিয়ে আনার। নাহলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করা হবে।

ব্যাটারিচালিত অটো মালিক সমিতির সভাপতি সাগর বলেন, তাদেরকে না জানিয়েই একটি পক্ষ ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে হঠাৎ অটো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। বিষয়টি রাসিক মেয়রকে অবগত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান নান্নু জানান, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন বন্ধের দাবিতে রাজশাহীর পরিবহন মালিক গ্রুপ রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করেছে। গত শনিবার দুপুর থেকে বাস বন্ধ আছে। কতদিন বা কতক্ষণ বন্ধ থাকবে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অটোরিকশা বন্ধ না হলে আমাদের ধর্মঘট চলবে।