গবাদিপশুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগ
মিজান মাহী দুর্গাপুর থেকে: দুর্গাপুরে গবাদিপশুর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বসতবাড়ি ও খামারে লালন-পালন করা দুই শতাধিক গরু এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরুকে ভ্যাকসিন দিয়েও ভাল না হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে গবাদিপশু এমন রোগে আক্রান্ত হতে শুরু হয়। প্রথমে গরুর চামড়ার উপরিভাগে টিউমারের মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। পরে তা মানুষের শরীরে হওয়া পক্সের মতো গুটি গুটি হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। দু’ তিনদিনের মধ্যে প্রাণীর সারা শরীরে তা বড় বড় হয়ে ফেটে ঘা-তে পরিণত হচ্ছে। রোগাক্রান্ত গরু কোনো খাবার মুখে নিচ্ছে না। অনেক গরুর বুকের নিচে হওয়া গুটিতে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। পরে সেখান থেকে খসে পড়ছে মাংস।
উপজেলার দেবীপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বাড়ির পাশে এক ব্যক্তির গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এখন তাঁর বাছুর গরু আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসক ডেকে ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছে তাতে কোন কাজ হয়নি। বাছুর গরুর শরীরে হওয়া গুটিতে রক্ত-পুঁজ হয়ে তা ফেটে গেছে। এখন বিভিন্ন স্থান থেকে মাংস খসে পড়ছে। রোগাক্রান্ত বাছুর প্রথমে আলাদা রাখলেও গাভীর গায়েও এখন গুটি বের হতে শুরু করেছে।
একই গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে প্রথমে তাঁর একটি গাভী এ রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে তাঁর গাভীটি মরার উপক্রম। অন্যদের খামারে রোগ দেখে আমি প্রথমে থেকে পশু চিকিৎসকের কথামতো ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। কেউ ভালো কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আবু আনাছ বলেন, অফিসিয়ালি ভাবে দুর্গাপুরে প্রায় ২ শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর বাইরে আরো বেশি গরু আক্রান্ত রয়েছে। ভ্যাকসিনেও কাজ হচ্ছে না। মশা ও মাছি দ্বারা এ রোগের প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। আক্রান্তের মধ্যে বাছুর গরুর সংখ্যা বেশি। আক্রান্ত হলে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগছে ভাল হতে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর অবস্থা খুবই নাজুক। গরুর শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে। এই রোগে শুধুমাত্র গবাদিপশু আক্রান্ত হয়। মানুষ আক্রান্ত হয় না।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, গরুর শরীরে ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়ানোর বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে। এ রোগ মোকাবেলায় গত সপ্তাহে দুর্গাপুরে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। ভ্যাকসিন আসায় এ রোগে এখন গরুর মৃত্যুহার খুব কম। তিনি আরো বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর শরীরে মশা ও মাছি থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গরুর গায়ে যেন মশা মাছি বসতে না পারে এজন্য খামারিদের মশারী ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।