বাড়ছে ইভিএম বিতর্ক
অনলাইন ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সিদ্ধান্তকে নিজস্ব বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে নির্বাচনে অনিয়ম বন্ধ করতে সব আসনে ইভিএমের দাবি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে ইসির সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ করতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশন নিয়ে ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটুট রয়েছে দলটি। এদিকে প্রতি আসনে ৫ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ডা. জাফরুল্লাহর চৌধুরী।
দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিজস্ব বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা ছাড়াও তারা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে ইভিএম বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ‘তাড়াহুড়া ছিল না’ এবং এ সিদ্ধান্ত কমিশনের ‘নিজস্ব’।
সিইসি বলেন, ইভিএমে যাওয়ার একটা বড় সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। ভোটটাকে রাজনৈতিক দল হ্যান্ডেল করবে না, হ্যান্ডেল করবে ইসি। আমরা কমিশন কিন্তু পুরোপুরি আস্থাশীল হয়েছি, একেবারে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপাতত ১৫০ সিটে আমরা ইভিএম ব্যবহার করব। নির্বাচনে ইভিএম নতুন কোনো সংকট তৈরি করবে কি না- এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওয়েট করেন, দেখি কী হয়।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপে আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন অর্ধেক আসনে সম্মত হয়েছে। আমরা দাবি করেছি, সিদ্ধান্ত কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বলেছি আধুনিক যে টেকনোলজি এটা ব্যবহার করা সংগত। কারচুপির ও জালিয়াতির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। তারপরও কিছু কিছু করে ইভিএম চালু করা হয়েছিল। এবারো আমরা ৩০০ আসনে চেয়েছিলাম। ইভিএমে কোনো ঝামেলা নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা ইভিএমকে ভয় পায়, আমি জানি না তারা জনগণের ভোট নিরপেক্ষ হোক, কারচুপিমুক্ত হোক-এটা চায় কিনা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে কারচুপি করতেই ইভিএম ভোট গ্রহণ করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
অন্যদিকে দেড়শ আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার মতে, প্রয়োজনে ৩০০ আসনের প্রতি আসনের পাঁচ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, কমিশন খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে চলছে। সরকারের উচিত হবে যে করেই হোক সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগ বাড়িয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। আজকেও হানিফ (মাহবুব উল আলম) বলেছেন, দেড়শ’ টা নয়, আমরা তিনশ’ টাতে ইভিএম চাই। তাদের উচিত হবে একেবারে চুপ থাকা। ইভিএমের কারণে যদি নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়, বয়কট হয় তাহলে তা জাতির জন্যে দুর্ভাগ্যজনক হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ইভিএমের কারণে ভোট বর্জন হলে দায় কমিশনের হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি নির্বাচন কমিশন নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতেই আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সরকার ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছিল, কমিশন সমঝোতার মাধ্যমে অর্ধেক আসনে সরকারের সঙ্গে রফা করেছে। এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হলো, নির্বাচন কমিশন সরকারের হয়েই কাজ করছে।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে ইসির সমঝোতা হয়েছে। যার মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে৷ ইভিএমে ভোটের মাধ্যমে ইসি সরকারের ইচ্ছার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটাবে। বিএনপি এসব ইভিএম মানে না। সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে, তবে তা হতে হবে ব্যালটে।