ঢাকা | জুলাই ২৬, ২০২৪ - ১১:২২ পূর্বাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পটাশ না পেয়ে হতাশ চাষিরা

  • আপডেট: Wednesday, August 24, 2022 - 12:55 pm

অনলাইন ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের সংকট। কৃষকদের অভিযোগ বেশিরভাগ ডিলারের কাছে পটাশ সার নেই।

এক দোকান থেকে আরেক দোকার ঘুরেও এ সার পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেখানে কিছু আছে সেখানে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ‘সরবরাহ নেই’ জানিয়ে দাম বেশি নিচ্ছেন কোনো কোনো সার ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না পটাশ সার। এতে সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। আম চাষিরা বাগানে বিভিন্ন সার দিয়ে থাকেন। ধান, পাটসহ নানা অর্থকরী ফসলেও সার দেন সাধারণ চাষিরা। তবে চাষিরা পটাশ সারের সংকটের কারণে উপযুক্ত সময়ে আম বাগান, ধান ও অন্যান্য ফসলে সার দিতে পারেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ না থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এমওপি সারের বরাদ্দ রয়েছে ৮৫১ মেট্রিক টন। কিন্তু বিএডিসির গুদামে বরাদ্দকৃত সারের মজুত নেই। এর মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত মাত্র ১৫৩ মেট্রিক টন সরবরাহ করেছে বিএডিসি। ডিলাররা টাকা জমা দিয়েছেন কিন্তু সার পাচ্ছেন না।

জেলার সার ডিলাররা বলছেন, চাহিদা মাফিক সার পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাতে সময় মতো সার দিচ্ছে না বিএডিসি। শ্রাবণ-ভাদ্র মাস আম বাগানে সার দেওয়ার সময়। আমের অধিক উৎপাদন পেতে প্রতিটি আম গাছের গোড়ায় ইউরিয়া, ডিএপি ও পটাশ সার দিতে হয়। চাষিরা বলছেন, সঠিক সময়ে সার দিতে না পারলে আমের উৎপাদন কমে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তেররশিয়ার আম বাগান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাজারের অনেক দোকান ঘুরেও সার পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে পটাশ সার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় আম বাগানে সার দিতে না পারলে গাছ বাড়বে না। এতে আম চাষিরা লোকসানে পড়বেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার শহবাজপুর ইউনিয়নের আম চাষি ঈসরাঈল হোসেন বলেন, গত দুদিন ধরে শ্রমিক ঠিক করে রেখেছি। আম বাগানে সার দেব বলে। আমার বাগানে ডিএপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন। শনিবার দুপুরে দোকানে গিয়ে ডিএপি সার পেলেও পটাশ পাওয়া যায়নি। এ জন্য বাগানে সার দেওয়া সম্ভব হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকরা পটাশ সার পাচ্ছে না বললেই চলে। যারা বিক্রি করছেন তারা অবৈধভাবে অনেক বেশি দাম নিচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫ টাকা কেজি হলেও কৃষকদের বাধ্য হয়ে ৩২ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। সারের সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে দ্বিগুণ দাম নেওয়া হলেও নজরদারির বালাই নেই। কৃষিবিভাগও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

নাচোল উপজেলার বিএডিসির সার ডিলার তরিকুল ইসলাম জানান, বরাদ্দের বিপরীতে পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেও চলতি মাসের জন্য বরাদ্দকৃত পটাশ সার পাওয়া যায়নি। পটাশ না থাকায় অন্য সারও বিক্রি হচ্ছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের খুচরা সার বিক্রেতা আব্দুল বারী জানান, পটাশ সার বিএডিসি সরবরাহ করতে পারছে না। তাই বাজারে সংকট রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, এক সপ্তাহ ধরে তার কাছে ওই সার না থাকায় অন্যান্য সার বিক্রিও কমে গেছে।

সদর উপজেলার গোবরাতলা এলাকার বিসিআইসি ডিলার তানিউল হাসান ব্রাদার্সের মালিক তানিউল হক বলেন, গত দুই মাস ধরে পটাশ সারের তীব্র সংকট। কৃষকের চাহিদা মতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যেই পটাশ সারের অর্ডার দিয়ে রেখেছি। কিন্তু পাচ্ছি না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএডিসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বাবু বলেন, বিএডিসি সার সরবরাহ করতে না পারায় বাজারে এমওপির সংকট হয়েছে, কিন্তু দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে এ তথ্য ঠিক নয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএডিসির গুদাম ইনচার্জ মাহাতাব আলী বলেন, চলতি মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এমওপি সারের বরাদ্দ রয়েছে ৮৫১ মেট্রিক টন। কিন্তু বিএডিসির গুদামে বরাদ্দকৃত সারের মজুত নেই। গত বুধবার পর্যন্ত ১৫৩ মেট্রিক টন সরবরাহ করেছে বিএডিসি। যা ডিলারদের দেওয়া হয়েছে। বাকি সার এলেই চাহিদা মতো ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর পলাশ সরকার জানান, জেলায় মোট কৃষক পরিবার ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৯। কয়েকদিন আগে পটাশ সারের কিছুটা সংকট থাকলেও বর্তমানে কোনো সংকট নেই। সার ডিলাররা বগুড়ার সান্তাহার থেকে পে অর্ডার জমা দেওয়ার মাধ্যমে যেকোন সময় সার নিতে পারবে। আর সারের দাম কোনো ডিলার বেশি নিতে পারে না বা নিচ্ছেও না বলে দাবি তার।

সোনালী/জেআর