বাংলাদেশসহ অনেক দেশ এখন অর্থনৈতিক চাপের মুখে: রাষ্ট্রপতি
অনলাইন ডেস্ক: করোনায় নাজেহাল অবস্থার পর বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম অনেক কিছু বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হয়। দাম বাড়ানের পরও ভারতে তেলের দাম আমাদের চেয়ে বেশি। সরকারকে অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হয়। এখন রাশিয়া থেকে সবাই তেল আনার চেষ্টা করছে। আমাদের সরকারও রাশিয়া থেকে তেল কীভাবে আনা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশই এখন অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। গত দুই-আড়াই বছর ধরে এসব চলছে। সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে সুধীজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অডিটোরিয়ামে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। করোনার সময় বিশ্বের অনেক দেশ যে কঠিন অবস্থা পার করেছে, তা বর্ণনা করার মতো না। তবে আমাদের সরকার করোনার সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তুলনামূলকভাবে এ বিষয়ে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো আছি আমরা।
রাষ্ট্রপতি বর্তমানে জ্বালানি সংকট ও এর জেরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।’ তিনি শ্রীলঙ্কার দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সংকটসহ নানা কারণে শ্রীলঙ্কার সরকার পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু নতুন সরকার হলেও কোনও লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না। প্রকৃতপক্ষে ওই দেশটির আর্থিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে যত সরকারই আসুক, বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ এত সহজ হবে না। সরকারকে সময় দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শুধু শ্রীলঙ্কা না, এমন অনেক দেশই এ ধরণের সমস্যা মোকাবিলা করছে।’
তিনি নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই সংকটকালে সরকারের কাছ থেকে এলাকার জন্য বড় কোনও কাজ বা প্রকল্প আদায়ে চাপ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি স্বাভাবিক অবস্থা থাকতো, তাহলে হাওর এলাকায় আরও অনেক কাজ করা সম্ভব হতো। তবে পরিকল্পনা আছে, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে, অর্থনৈতিক সংকট কেটে গেলে হাওরে অনেক উন্নয়ন হবে।’
রাষ্ট্রপতি গত বন্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, ‘কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন— হাওরের অলওয়েদার সড়কের জন্য নাকি সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছে।’ এ অভিযোগ খন্ডন করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত সিলেট-সুনামগঞ্জ থেকে আসা পানি থেকে আমাদের হাওরে অকাল বন্যা হয়। এটাই ছোটবেলা থেকে আমরা জেনে ও দেখে এসেছি। ওইসব সমালোচনা বা কথা একেবারেই অযৌক্তিক। এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কথা। মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না। আমি মনে করি, এজন্য দেশবাসী তাদের ধিক্কার দেবে।’
সোমবার ৪ দিনের সফরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে পৌঁছান। বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে মিঠামইনে যান তিনি। সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমদ তৌফিক, আফজাল হোসেন, অধ্যক্ষ আবদুল হক নুরু, সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ সময় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। মিঠামইন পৌঁছার পর রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সরকারি কলেজ পরিদর্শন করেন। চার দিনের সফরে রাষ্ট্রপতি হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শন করবেন। তিনি সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি অডিটরিয়ামে পেশাজীবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিন ঘণ্টা মতবিনিময়সহ তাদের বক্তব্য শোনেন। আলোচনায় অংশ নেয়, সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য সমির কুমার বৈষ্ণব প্রমুখ।
তিনি আজ ২৩ আগষ্ট মঙ্গলবার মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ফাউন্ডেশান ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করবেন।
সোনালী/জেআর