ঢাকা | নভেম্বর ১৮, ২০২৪ - ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন কমেছে, রপ্তানিতেও ভাটা

  • আপডেট: Tuesday, August 23, 2022 - 9:54 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে তৈরি পোশাক খাতকে। কারণ এ শিল্প খাতে অনেকাংশে ব্যবহার হয়ে থাকে জ্বালানি। এমনিতে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প গত কয়েক মাস ধরে ধুকছে। পশ্চিমের দেশগুলোতে মন্দার প্রভাবে পোশাক বিক্রি কমেছে। বড় বড় ব্রান্ডগুলো দোকানের পোশাক বিক্রি করতে পারছে না।

এর মধ্যে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে কমেছে পোশাক পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে পোশাক খাতে সংকট কাটছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া বিগত ৩৫ বছরের তুলনায় গত দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীরা নানামুখী সমস্যায় পড়ে পোশাক খাতে অবনতি নেমে আসে। এ কারণে এ সেক্টরে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম বিজিএম’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ১৩৩টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানার মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। দশ বছরের ব্যবধানে ১৯৯৫ সালে ৩৫৯টি কারখানার মধ্যে ১৪টি, ২০০৫ সালে ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৮৯টি ও ২০১৫ সালে ৭৫৬টি কারখানার মধ্যে ৩০১টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে বিজিএমইএ’র নিবন্ধিত ৬৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নানা সমস্যার মধ্যেও ১৯০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত বছর বিজিএমইর নিবন্ধিত ৬৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪শ কারখানা বন্ধ হয়েছিল, উৎপাদনে ছিল মাত্র ২৯৩টি কারখানা।

চট্টগ্রাম রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো ৪ হাজার ৩০৪ কোটি ডলার পণ্যের মধ্যে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ডলার পোশাক পণ্য রয়েছে। অর্থাৎ রপ্তানি করা বিভিন্ন পণ্যের ৮৮ ভাগই ছিল পোশাক পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭১ হাজার ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৪২৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, মার্চ মাসে ৪৭৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার, এপ্রিল মাসে ৪৭৪ কোটি ডলার ও জুন মাসে ৪৯১ কোটি ডলার পোশাক পণ্য ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ও বিদ্যুৎ সমস্যা প্রকট হবার পর থেকেই রপ্তানিতে নেমে আসে ভাটা। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ৯৬ কোটি টাকা রপ্তানি কমেছে। জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকার পোশাক পণ্য।

এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এফেক্ট পড়েছে। একটা বড় ধরনের চাপ জনগণের ওপর পড়ছে। শিল্প কারখানার ওপর পড়ছে, উৎপাদন খরচের ওপর পড়ছে, এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই কারো।

বিজিএমই’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে ডিপো মালিকরাও সার্ভিস চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছেন। চলতি অর্থবছর ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর বড় অংশই আসবে পোশাক খাত থেকে। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা মুশকিল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি কারখানাগুলোতে উৎপাদন ও আয় কমে গেলে কারখানা ব্যয় পরিচালনা করা মুশকিল হয়ে পড়বে।

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) আমদানি পণ্যের হ্যান্ডলিং চার্জ ৩৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। নতুন চার্জ অনুযায়ী, ডিপোতে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাবদ ব্যবসায়ীদের ১২ হাজার ৮৩০ টাকা গুনতে হবে। যা আগে ছিল ৯ হাজার ৫০৪ টাকা। ৪০ ফুট কনটেইনারের চার্জ ১১ হাজার ৫ টাকা থেকে ১৪ হাজার ৮৫৭ টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া গত ২১ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে রপ্তানি পণ্য ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ২৫ শতাংশ বাড়াল বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)। গত নয় মাসে দুই দফায় হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ বাড়ল মোট ৫৮ শতাংশ। এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে প্রাইভেট ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) আমদানি ও রপ্তানি উভয় পণ্যে হ্যান্ডলিং চার্জ ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল।

সাম্প্রতিক বৃদ্ধির পর রপ্তানি পণ্যের হ্যান্ডলিং চার্জ ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০ ফুট সাইজের (টিইউ) একটি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরের আগে লাগত ৭ হাজার ৫১১ টাকা। এখন সেটি ৫ হাজার ৫৬৯ টাকা বেড়ে ১৩ হাজার ৮০ টাকা হয়েছে।

২০১০ সালে আমদানি ও রপ্তানি হ্যান্ডলিং চার্জ নির্ধারণের পর ২০১৬ সালে বিকডা এই চার্জ ১৬ শতাংশ এবং পরে ২০২০ সালের মার্চ মাসে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে।

২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ টিইউএস কনটেইনার হ্যান্ডল করা করা হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালে সব আইসিডি ৭ লাখ ২০ হাজার টিইইউএস রপ্তানি কনটেইনার এবং ২ লাখ ৯২ হাজার টিইইউএস আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশেনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ ৪২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল বিকডা। তবে বৈঠকে আলোচনার পর ২৫ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিকডা সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, আইসিডি কার্যক্রম পরিচালনায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, সেগুলো ডিজেলচালিত। সে কারণে আইসিডির চার্জ বৃদ্ধি করতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর করেছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।