ঢাকা | নভেম্বর ১৭, ২০২৪ - ১০:১৫ অপরাহ্ন

সিলেট আওয়ামী লীগের ৩ কমিটিতেই আছেন ড. মোমেন

  • আপডেট: Sunday, August 21, 2022 - 3:55 pm

অনলাইন ডেস্ক: সম্প্রতি কিছু বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সবশেষ চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি ভারতকে বলে এসেছি, আওয়ামী লীগ সরকারের টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার সেসব করুন।’ তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের কেউ নন। দলে তার কোনো পদ-পদবিও নেই। তিনি সরকারের মন্ত্রী। কাজেই তিনি যা বলবেন সেটা কোনোভাবেই দলের বক্তব্য হতে পারে না।’

শনিবার (২০ আগস্ট) ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এক অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানের এমন বক্তব্যে সিলেটে তোলপাড় হচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে বলছেন, আব্দুর রহমান মিথ্যা বলেছেন। ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর সদস্য পদে তার নাম রয়েছে। সিলেট নগরের ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ড. মোমেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে রয়েছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে রয়েছে ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নাম। পাশাপাশি দলটির সিলেট জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হিসেবে ৩ নম্বরে রয়েছে তার নাম।

২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ড. এ কে আব্দুল মোমেন আমাদের কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে আছেন। এক নম্বর সদস্য দলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘ড. এ কে মোমেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য বলেও শুনেছি।’

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানের দাবি প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘আব্দুর রহমান সাহেব কী বলেছেন জানি না। তবে দলের কেউ না হলে তিনি কীভাবে দলীয় প্রতীকে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করে এমপি ও পরে সরকারের মন্ত্রী হন?’

এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমানের এমন বক্তব্যে সিলেটের সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই তার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মিসবাহ উদ্দীন আহমদ ফেসবুকে লেখেন, ‘সিলেট নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে ২ নম্বর সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর ওই কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য রাখা হয় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ড. মোমেনের বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে (সদ্যপ্রয়াত) ও ২ নম্বর সদস্য রাখা হয় ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে। ভুল যদি না হয় তবে এই কমিটি এখনো বহাল রয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হব। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’

তার এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালাচনার সৃষ্টি হয়। বিএনপির মহাসচিবও এই বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানান।

ড. মোমেনের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। কিন্তু তাই বলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করবো! এই ধরনের অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না, করেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকেও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, কিছু কিছু লোক সময় সময় অনেক উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে। আপনার দেশেও কিছু দুষ্টু লোক আছে, আমার দেশেও দুষ্টু লোক আছে। তারা তিলকে তাল করে। আপনার সরকারের একটা দায়িত্ব হবে এবং আমার সরকারেরও দায়িত্ব আছে যে তিলকে তাল করার সুযোগ সৃষ্টি না করে দেওয়া। আমরা যদি এটা করি তাহলে সম্প্রীতি থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের অস্থিরতা থাকবে না। আমি বলেছি, আমরা চাই শেখ হাসিনার স্থিতিশীলতা থাকুক। এই ব্যাপারে আপনারা সাহায্য করলে আমরা খুব খুশি হবো।’

বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ড. মোমেন আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, শেখ হাসিনা যদি সরকারে থাকেন, তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। আর স্থিতিশীলতা থাকলেই আমাদের উন্নয়নের যে মশাল…। উন্নয়ন শুধু ভারতে গিয়ে আমি যেটা বলেছি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? উনি বললেন, শেখ হাসিনার সেই জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম—এটা ঘোষণার পরে, দ্বিতীয়ত উনি বলেছেন, বাংলাদেশ ক্যানট বি এ হাব ফর টেরোরিস্ট (বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে পারে না)। এরপরে আসাম, মেঘালয় সবগুলো জেলায় আর সন্ত্রাসী তৎপরতা নাই। সন্ত্রাসী তৎপরতা না থাকায় তাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। উনি বললেন, আমার এখানে বহু হাসপাতাল, বহু ইনভেস্টমেন্ট আসছে। যেহেতু আমাদের এই আসামে কোনো সন্ত্রাসী নেই। এজন্য শেখ হাসিনা, তার আহ্বানে এটা হয়েছে।’

সোনালী/জেআর