ঢাকা | মে ১০, ২০২৫ - ৪:৪৭ অপরাহ্ন

মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার বিচার চাইতে থানায় গিয়ে মারধরের শিকার বাবা

  • আপডেট: Sunday, August 21, 2022 - 3:01 pm

অনলাইন ডেস্ক: মানিকগঞ্জের শিবালয় থানায় মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক বাবা। শনিবার রাতে এএসআই আরিফ হোসেন তাকে থানার ভেতর বেধড়ক মারপিট করেন। এই ঘটনায় রাতেই অভিযুক্ত এএসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী রোববার সকালে সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ওই শিশুর বাবা জানান, স্ত্রীসহ তিনি ঢাকায় থাকেন। তার পাঁচ বছরের শিশু মেয়ে থাকে গ্রামে দাদীর কাছে। গত ২০ জুলাই শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মান্নান খানের চাচাতো ভাই রজ্জব খান তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি দেখে ফেলেন শিশুটির দাদী। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও, অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না। উল্টো শিশুর বাবাকেই বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হতো। এর পর গত ১৪ আগস্ট শিবালয় থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও থানা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শনিবার সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে দাদী ও শিশু মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান তিনি। এ সময় থানার ওসি রুমে ছিলেন না। তারপর থানার আসার কারণ জানতে এগিয়ে আসেন এএসআই আরিফ হোসেন। তাকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলা হয়। কিন্তু তিনি ঘটনাটি কিছুতেই বিশ্বাস করছিলেন না। কথাবার্তার এক পর্যায়ে শার্টের কলার ধরে তাকে একটি রুমে নিয়ে যান এএসআই আরিফ হোসেন।

বিচারপ্রার্থী ওই বাবা আরও অভিযোগ করেন, রুমে নেওয়ার পর এএসআই আরিফ হোসেন অভিযুক্তের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মান্নানকে ফোনে রেখে তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি লাথি মারাসহ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এসময় বাইরে তার মা ও শিশু মেয়ে কান্নাকাটি করলেও আরিফের হাত থেকে রক্ষায় থানার কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে আরিফ তাকে ফ্লোর থেকে তুলে বলেন- ‘যা চলে যা। পেছন দিকে তাকাবি না, দৌড়ে চলে যাবি।’

শিশুটির দাদী জানান, ছেলের সঙ্গে নাতনীকে কোলে নিয়ে তিনিও থানায় যান। এএসআই আরিফ যখন তার ছেলেকে টেনে রুমে নিয়ে মারপিট করেন তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাত-পা ধরে তিনি কান্নাকাটি করেছেন। কিন্তু কেউ তার ছেলেকে উদ্ধার করেনি। এসময় তার শিশু নাতনীও কান্নাকাটি করেছে। অনেক ভয় পেয়েছে সে। পরে ছেলেকে উদ্ধার করে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার পা, হাত ও মাথার বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

একজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে পুলিশ সদস্যের এমন আচরণের বিষয়টি জানাতে শনিবার রাতেই মা ও শিশু মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান শিশুটির বাবা। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মা ও এলাকার একজনের কাঁধে ভর করে শিশুটির বাবা শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী তাদের ঘটনা শুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী জানান, ঘটনা জানার পর অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করা হবে। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেস্টা চলছে বলে জানান তিনি।

শিবালয় থানার অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় একজন ব্যক্তি থানায় এসে জানান তার চার বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। চার বছরের শিশুকে ধর্ষণের বিষয়টি সন্দেহের সৃস্টি হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা মান্নানকে ফোন দেওয়া হয়। তখন তিনি বলেন, অভিযোগকারী মিথ্যা কথা বলছে, তার চাচাতো ভাই এ ধরনের ঘটনা ঘটায়নি। পরে ওই ব্যক্তিকে বোঝানোর পরও ধর্ষণচেষ্টার সাক্ষী আছে দাবি করায় তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়। তিনি অভিযোগ দিলেও তার মোবাইল নম্বর দিতে চান না। এ নিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে এএসআই আরিফ খারাপ আচরণ করেছেন বলে সমকালকে জানান।

তিনি বলেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি লাঠি দিয়ে পেটাননি, শুধু দুটো চড় দিয়েছেন। এটা করা ঠিক হয়নি তার। তিনি আরও বলেন, তাকে রাতেই পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

এ দিকে শিবালয় থানার ওসি মো. শাহীন জানান, শিশুটিকে ধর্ষণচেষ্টা মামলা শনিবার রাতেই রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি সন্ধ্যার পর থানায় ছিলেন না। ওই সময় এএসআই আরিফ হোসেন শিশুটির বাবাকে মারধর করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এএসআই এক বছরের বেশি সময় ধরে শিবালয় থানায় ছিলেন।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS