ঢাকা | মে ১০, ২০২৫ - ৪:৫৮ অপরাহ্ন

ছিল না প্রশিক্ষণ, সেই ক্রেন চালাচ্ছিলেন হেলপার: র‌্যাব

  • আপডেট: Thursday, August 18, 2022 - 10:07 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর উত্তরায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকার চাপা দেয়ার সময় ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী (হেলপার) মো. রাকিব হোসেন (২৩)। আর বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ক্রেনচালক আল আমিন।

র‌্যাব বলছে, রাকিব হোসেনের ক্রেন চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। আবার মূল চালক আল আমিনের হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও ভারি যানের লাইসেন্স ছিল না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি ব‌লেন বিআরটি প্রকল্পের যে ক্রেন থেকে প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডার পড়েছে সেটির সক্ষমতা ছিল ৪৫-৫০ টন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ক্রেনে যে গার্ডার ছিল সেটির ওজন ছিল ৬০-৭০ টন। থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিল্ড ট্রেড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে ক্রেনটি সরবরাহ করে। ক্রেনটি আনুমানিক ১৯৯৬-৯৭ সালে আনা হয়েছিল। প্রথমে ক্রেনটির সক্ষমতা ৮০ টন ছিল। পরে আস্তে আস্তে ক্রেনটির সক্ষমতা কমে যায়। সর্বশেষ ক্রেনটির সক্ষমতা ছিল ৪৫-৫০ টন। এছাড়া ২০২১ সালে সর্বশেষ ফিটনেস যাচাই করা হয়, এরপর ক্রেনটির আর ফিটনেস যাচাই করা হয়নি।

গ্রেপ্তারকৃত‌দের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া ত‌থ্যের বরাত দি‌য়ে র‌্যাব কর্মকর্তা ব‌লেন, অতিরিক্ত ভার বহন করায় ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এ ধরনের গার্ডার শিফট করতে কাউন্টার লোড ব্যবহার করা উচিত ছিল। আরেকটি ক্রেন পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই রাখা উচিত ছিল।

তি‌নি ব‌লেন, গত ১৫ আগস্ট বি‌কেলে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয় এবং দুই জন গুরুতর আহত হয়। দুর্ঘটনার পরে দ্রুত র‌্যাব সদর দপ্তরের উদ্ধার টিম ও র‌্যাব-১ এর একটি দল সর্বপ্রথম উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চার ঘণ্টাব্যাপী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

র‌্যাবের সহায়তায় অন্য একজন ক্রেন অপারেটর নিয়ে এসে গার্ডার উঁচু করে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি এবং নিহতদের উদ্ধারে সহায়তা করা হয়। এ দুর্ঘটনায় ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় অবহেলাজনিত কারণে একটি মামলা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন ব‌লেন, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি) তত্ত্বাবধানে ক্রেন দিয়ে প্রজেক্টের গার্ডার উত্তোলনের কাজ চলাকালে এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় মামলা হ‌লে র‌্যাব গো‌য়েন্দা নজরদারী শুরু ক‌রে। এরই প্রেক্ষি‌তে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১,৩,৪,৬ এবং র‌্যাব-১২ এর যৌথ অভিযানে গত রা‌তে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে ক্রেন চালক আল আমিন হোসেন রে‌ফে হৃদয় (২৫), হেলপার রাকিব হোসেন (২৩), দুর্ঘটনাস্থলে নিরপাত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান রুবেল (২৮), আফরোজ মিয়া (৫০), ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহ (৩৯), হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফসকন বাংলাদেশ লিমিটেড এর সত্ত্বাধিকারী ইফতেখার হোসেন (৩৯), হেড অব অপারেশন আজহারুল ইসলাম মিঠু (৪৫), ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন ওর‌ফে তুষার (৪২) এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা (৩৩) ও মঞ্জুরুল ইসলামকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

তা‌দের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি থে‌কে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামক একটি প্রতিষ্ঠান যার সত্ত্বধিকারী ‌গ্রেপ্তার ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন গ্রেফতারকৃত আজহারুল ইসলাম মিঠু। ভারী যন্ত্রপাতি ইফসকনের কা‌ছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানীর ‌থে‌ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটি ভাড়া নেয়।

এছাড়াও প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চয়নের দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি’র সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলীকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের এবং হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ছি‌লেন। এছাড়া সিজিজিসি’র প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামও দায়িত্বে ‌ছি‌লেন। তা‌দের দা‌য়ি‌ত্বে অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘ‌টে।

ঘাতক ক্রেনের মূল অপারেটর আল আমিন। তার হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ২-৩টি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার পর চল‌তি বছ‌রের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃত রাকিব ৩ মাস আগে ওই প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তার ক্রেন চালনা করার কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার দিন আল আমিন ও রাকিব দুপুর ২টা থে‌কে ক্রেন চালনা শুরু করে।

একটি গার্ডার স্থাপন শেষে ২য় গার্ডার স্থাপনের সময় ক্রেনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের গার্ডার উত্তোলনের জন্য ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডারটি প্রাইভেটকারের উপর ছিটকে পড়ে উক্ত দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।

দুর্ঘটনার সময় হেলপার রাকিব ক্রেন চালা‌চ্ছি‌লেন এবং ক্রেন অপারেটর আল আমিন ক্রেনের বাহির থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর অপারেটর আল আমিন হেলপার রাকিব ঘটনাস্থল প‌ালি‌য়ে যান।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS