ঢাকা | ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ - ১০:৫২ অপরাহ্ন

আমন খেত রক্ষায় কৃষক দিশেহারা

  • আপডেট: Wednesday, August 17, 2022 - 10:45 pm

 

রেজাউল ইসলাম সেলিম, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) থেকে: চলছে বৃষ্টিনির্ভর আমনের ভরা মৌসুম। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) পর্যন্ত ৪৪ দিনে নওগাঁয় বৃষ্টি হয়েছে ২০৫ মিলিমিটার। অথচ গত বছর শুধু জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৭৭৪ মিলিমিটার।

অনাবৃষ্টিতে আমন ধানের খেত ফেটে চৌচির। মাঠে মাঠে গভীর-অগভীর নলকূপ চালু করে ফসল বাঁচানোর প্রাণান্তর চেষ্টা করছেন নিয়ামতপুরের কৃষক। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌওসুমে সেচ দিয়ে আমনের খেত রক্ষায় কৃষকের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমনের মাঠ তৈরী করতে হয়েছে সেচের মাধ্যমে। এছাড়াও ধানের চারা রোপনের পর এখন পর্যন্ত খেতে সেচ দিতে হয়েছে চার বার। এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপক্ষে আরও আট-নয় বার সেচ দিতে হতে পারে। সেই হিসাব মতে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচ খরচ ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

নিয়ামতপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় আমনের আবাদ হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে। মাঠে রয়েছে আউস ধান। কিছুদিনের মধ্যে আউস ধান ঘরে উঠবে কৃষকের। এ ধান ঘরে উঠলে আমনের আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লীষ্ট বিভাগ। তবে বিরাজমান খরা মোকাবেলায় সম্পূরক সেচের জন্য মাঠে রয়েছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপ, অগভীর নলকুপসহ খাল-খাড়ী ও পুকুর পস্কনি। এছাড়াও রয়েছে কিছু ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র।

নিয়ামতপুর জোন বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ জানান, বর্তমান খরা মোকাবেলায় ৫৯৮ টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। এছাড়াও ২০৪ কিলোমিটার খাল-খাড়ী ও ৪৩৩টি পূণঃখননকৃত পুকুরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন রয়েছে। যা থেকে কৃষক সেচের মাধ্যমে আমনের মাঠে ব্যবহার করছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সেচের অভাবে অনেক জমিতে ফাটল ধরেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ওইসব জমিতে সেচ দিতে না পারলে ধান গাছ পুড়ে মরবে জানান রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা গ্রামের কৃষক এজাবুল হক। তিনি এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। চলমান খরার কারনে শুরু থেকেই তিনি সেচের মাধ্যমেই মাঠ প্রস্তুতসহ আমনের চারা রোপন করেছেন। এখন পর্যন্ত ধান গাছ বাঁচিয়ে রাখতে চারবার সেচ দিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি না হওয়ায় এতে তার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

দামপুরা গ্রামে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর আনিসুর রহমান বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে চাহিদামত (বিদ্যুৎ) না থাকায় কৃষকেরা দিনের পর দিন লাইন দিয়েও জমিতে সেচ দিতে পারছে না। বাধ্য হয়ে খেতে পানি চাওয়া কৃষকদের সিরিয়াল করা হয়েছে। এতে করে মাঝেমধ্যে ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। লোডশেডিংয়ের কারণে একজন কৃষকের সিরিয়াল আসতে একসপ্তাহ সময় লেগে যাচ্ছে। তত দিনে ওই সব কৃষকের খেত ফেটে চৌঁচির। আর খেতের ধানের অবস্থা প্রায় মরা মরা।’

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ উপকেন্দ্রের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, গত ১ জুলাই থেকে গত বধবার পর্যন্ত (১৬ আগস্ট) ৪৬ দিনে নওগাঁয় ২০৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অথচ গত বছর শুধু জুলাই মাসেই বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৭৪ মিলিমিটার। গত বছরের তুলনায় এই বছর তিন ভাগের এক ভাগেরও কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, চলতি আমনের ভরা মৌওসুমে এভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে এবার কৃষকদের আমন আবাদে সম্পূরক সেচের কারনে বাড়তি ২৫ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছর এক বিঘা জমিতে আমন আবাদে কৃষকের খরচ পড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এবার কৃষকের খরচ পড়তে পারে ১৬/১৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমিতে আমন আবাদে বাড়তি খরচ পড়বে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।